
আওয়ার টাইমস নিউজ।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে টানা কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসে এখন পর্যন্ত অন্তত ৩০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিহতদের বেশিরভাগই ভূমিধসে চাপা পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
রবিবার গৌহাটি থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। বর্তমানে আসাম, অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয়, মিজোরাম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড ও মণিপুর—এই সাতটি রাজ্যে ব্যাপক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
দেশটিতে এখন পর্যন্ত ভয়াবহ এ বন্যা ও ভূমিধসে প্রাণহানির বিবরণ:
অরুণাচল প্রদেশে মারা গেছেন ৯ জন
আসামে ৮ জন
মেঘালয়ে ৬ জন
মিজোরামে ভূমিধসে ৫ জন
ত্রিপুরা ও নাগাল্যান্ডে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২ জন করে
উল্লেখযোগ্যভাবে, গত তিন দিনের অবিরাম বৃষ্টিতে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে বেশ কয়েকটি জেলা ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে এবং আরও বিস্তৃত অঞ্চলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
সেনাবাহিনীর উদ্ধার অভিযান
ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা মণিপুরসহ দুর্গত এলাকায় ‘ব্যাপক উদ্ধার অভিযান’ চালাচ্ছে। শনিবার শত শত মানুষকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর ও খাদ্য, পানি এবং ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে।
ভূমিধসপ্রবণ এলাকায় সর্তকতা
মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড কে সাংমা এক বিবৃতিতে বলেন, “বিশেষ করে ভূমিধসপ্রবণ ও নিচু এলাকাগুলোতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
প্রতিবছরের মতো এবারও বর্ষা মানেই মৃত্যু
ভারতের প্রায় প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে এমন বন্যা ও ভূমিধসের ঘটনা ঘটে। ১.৪ বিলিয়ন জনসংখ্যার এই দেশে দুর্বল অবকাঠামো এবং পাহাড়ি অঞ্চলে অপরিকল্পিত বসবাস এ দুর্যোগের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে।
গত বছরের ঘটনা: বাংলাদেশে ইচ্ছাকৃত পানি ছেড়ে দেওয়া
উল্লেখ্য, গত বছর ভারত উজানের পানি হঠাৎ ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের অন্তত ছয়টি জেলা ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত করেছিল। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোনো পূর্ব-সতর্কতা না দিয়েই পানি ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলেও সমালোচনার মুখে পড়ে।
বাংলাদেশ সে সময় বিষয়টিকে ‘ইচ্ছাকৃত’ পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রতিবাদ জানায়। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, প্রতিবেশী দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা ও পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই এমন পানি ছেড়ে দেওয়া ছিল অমানবিক ও কূটনৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য।
বিশ্লেষকদের মতে, আজ ভারতের যে অঞ্চলগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত, সেগুলোই গত বছর বাংলাদেশের বন্যায় পরোক্ষভাবে ভূমিকা রেখেছিল। এবার প্রকৃতি যেন নিজের ভারসাম্য ফিরিয়ে দিতে চায়—যে অন্যকে ভাসিয়েছিল, সেই আজ নিজেই ভেসে যাচ্ছে।