
আওয়ার টাইমস নিউজ।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে ভয়াবহ ১২ দিনের সংঘাতের পর যুদ্ধবিরতি হলেও উত্তেজনার পারদ এখনো নামেনি। বরং যুদ্ধ-পরবর্তী প্রথম ভাষণে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির বক্তব্যে ফুটে উঠেছে স্পষ্ট হুঁশিয়ারি ও কঠিন প্রতিজ্ঞা—ইরান কখনো আত্মসমর্পণ করবে না।
ইরান-ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের এই সাম্প্রতিক সংঘাত কেবল একটি যুদ্ধই ছিল না, বরং এটি ছিল একটি ভূরাজনৈতিক ও আদর্শিক মুখোমুখি অবস্থান। এই প্রেক্ষাপটে আয়াতুল্লাহ খামেনির সর্বশেষ ভাষণ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করে বলেন, “তারা যুদ্ধে নেমেছিল কারণ তারা ভেবেছিল ইসরায়েল নামক ইহুদিবাদী শাসন ধ্বংস হয়ে যাবে যদি না তারা হস্তক্ষেপ করে।”
পরাজয়ের স্বীকারোক্তি নাকি বিজয়ের প্রোপাগান্ডা?
খামেনির দাবি অনুযায়ী, ইরান আমেরিকার মুখে এক ‘কঠিন থাপ্পড়’ দিয়েছে। যদিও বাস্তবতা অন্য কথা বলছে। যুদ্ধের সমাপ্তিতে ইরান হারিয়েছে তার পরমাণু কর্মসূচির গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞানী, সামরিক কর্মকর্তা এবং ধ্বংস হয়েছে তিনটি কেন্দ্রীয় পারমাণবিক স্থাপনা—ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান। এসব ক্ষতির ফলে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান বহু বছর পিছিয়ে গেছে।
অন্যদিকে ইরানি প্রতিশোধ সীমিত ছিল। কাতারে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বা হুথি-সমর্থিত কিছু আঞ্চলিক হামলা ছাড়া বড় কোনও প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি।
খামেনির প্রকাশ্যে আগমন: বাস্তবতার মুখোমুখি এক নেতা
যুদ্ধকালীন সময় আয়াতুল্লাহ খামেনি তেহরানের গোপন বাংকারে আশ্রয় নিয়েছিলেন। বিশ্ব গণমাধ্যম জানায়, তিনি দীর্ঘ সময় ধরে ইলেক্ট্রনিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিলেন। এই সময়ে ইরান ছিল ধ্বংস, হতাশা ও মানবিক বিপর্যয়ের মাঝে। যুদ্ধবিরতির পর তিনি যখন প্রকাশ্যে এলেন, তাঁকে স্বাগত জানায় এক ক্ষতবিক্ষত বাস্তবতা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, খামেনি যুদ্ধের ফলাফলকে ‘বিজয়’ আখ্যা দিলেও, সেটি মূলত একটি প্রতীকী ও রাজনৈতিক কৌশল। বাস্তবতা হলো—সামরিক, কূটনৈতিক ও কৌশলগত দিক থেকে ইরান এক চরম প্রতিকূলতার মুখে পড়েছে।
মধ্যস্থতাকারী কারা? শান্তির স্থায়িত্ব কতটুকু?
এই যুদ্ধবিরতি হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও কাতারের আমিরের মধ্যস্থতায়। যদিও এই চুক্তিকে অনেকে দেখছেন একটি কৌশলগত সময়ক্ষেপণ হিসেবে। কারণ ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইতিমধ্যে আবার হামলার হুমকি দিয়েছেন এবং যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছেন ইরানের বিরুদ্ধে।
তেহরানও পাল্টা জানিয়েছে, পরবর্তী আঘাতে তারা প্রস্তুত। ফলে এই যুদ্ধবিরতি যে খুব দীর্ঘস্থায়ী হবে না, তা আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা জোর দিয়েই বলছেন।
শেষ কথা: শান্তি না সংঘাত?
খামেনির হুঁশিয়ারির মধ্য দিয়ে স্পষ্ট যে, ইরান নিজেকে পরাজিত ভাবতে নারাজ। কিন্তু মুসলিম বিশ্বের অনৈক্য, ভূরাজনৈতিক বিভাজন ও পাশ্চাত্যের আধিপত্যবাদী কৌশল একত্রে ইরানকে একাকী করে ফেলেছে।
এই মুহূর্তে মুসলিম বিশ্বকে ভাবতে হবে—এই সংঘাত শুধু ইরানের একক যুদ্ধ নয়। এটি ছিল তাদের আত্মপরিচয়, স্বাধীনতা এবং ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর পরীক্ষাও। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বেশিরভাগ মুসলিম রাষ্ট্রের নীরবতা ইতিহাসে অমার্জনীয় হয়ে রইল।
তথ্যসূত্র: Al Jazeera, BBC, Anadolu, X (formerly Twitter)