
আওয়ার টাইমস নিউজ।
ডেস্ক রিপোর্ট
দোয়া কবুলের জন্য বিশেষ কিছু আমল এবং কৌশল রয়েছে, যা মহানবী (সা.) এর সুন্নাহ এবং ইসলামী শিক্ষার আলোকে আমরা জানতে পারি। এখানে কিছু আমল উল্লেখ করা হলো যা দোয়া কবুলের সম্ভাবনা বাড়াতে সহায়ক হতে পারে:
১. পাক-পবিত্র হয়ে দোয়া করা:
ওযু করে, পাক-পবিত্র অবস্থায় কিবলামুখী হয়ে দোয়া করা সুন্নত। মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্রতাকে ভালোবাসেন, তাই দোয়ার আগে পবিত্রতা অর্জন দোয়া কবুলের সম্ভাবনা বাড়ায়।
২. অল্লাহর প্রশংসা এবং দরুদ পাঠ:
দোয়ার শুরুতে এবং শেষে আল্লাহর প্রশংসা করা এবং মহানবী (সা.) এর উপর দরুদ পাঠ করা গুরুত্বপূর্ণ। মহানবী (সা.) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদ পাঠ না করে দোয়া করে, তার দোয়া আসমানের নিচে আটকে থাকে।” (তিরমিজি, হাদিস: ৩৪৭৭)
৩. বিশেষ সময়ে দোয়া করা:
কিছু বিশেষ সময় রয়েছে যখন দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যেমন:
তাহাজ্জুদের সময়: রাতের শেষ প্রহরে দোয়া করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ তাআলা তখন পৃথিবীর নিকটবর্তী আসমানে নেমে আসেন এবং বলেন, “কেউ কি আমার কাছে কিছু চাইবে, যাতে আমি তাকে দেই?” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৭৫৭)
জুমার দিন: শুক্রবারে বিশেষত আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময়টি অত্যন্ত মূল্যবান।
ইফতারের সময়: রোজা অবস্থায় ইফতার করার সময় দোয়া কবুল হয়। (তিরমিজি, হাদিস: ২৫২৬)
৪. আত্মবিশ্বাস এবং দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে দোয়া করা:
দোয়া করার সময় আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস থাকতে হবে। মহানবী (সা.) বলেছেন:
“তোমরা দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে দোয়া করো এবং জেনে রাখো, আল্লাহ অবহেলিত হৃদয় থেকে দোয়া কবুল করেন না।” (তিরমিজি, হাদিস: ৩৪৭৯)
৫. আল্লাহর নাম ধরে দোয়া করা (আসমাউল হুসনা):
আল্লাহর ৯৯টি গুণবাচক নাম দিয়ে দোয়া করলে তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যেমন, “ইয়া আর-রহমান”, “ইয়া আর-রহিম”, “ইয়া আল্লাহ”।
৬. ইস্তেগফার ও তাওবা করা:
পাপমুক্তি ও ক্ষমা প্রার্থনার জন্য ইস্তেগফার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইস্তেগফার করলে আল্লাহ তাআলা রিজিক বাড়ান এবং দোয়া কবুল করেন। কুরআনে বলা হয়েছে:
“আর তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল।” (সূরা নূহ, ৭১:১০)
৭. পরোপকার ও সদকা দেওয়া:
দোয়া কবুলের জন্য পরোপকার ও সদকা একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। আল্লাহ তাআলা দানশীল ও পরোপকারী ব্যক্তির দোয়া কবুল করতে বেশি আগ্রহী হন।
মহানবী (সা.) বলেছেন: “সদকা দিয়ে বিপদ দূর করো।” (তিরমিজি)
৮. অন্যের জন্য দোয়া করা:
নিজের জন্য দোয়া করার পাশাপাশি অন্যের জন্য দোয়া করলে ফেরেশতারা একই দোয়া আপনার জন্য করেন। মহানবী (সা.) বলেছেন:
“যখন কেউ তার অনুপস্থিত ভাইয়ের জন্য দোয়া করে, তখন একজন ফেরেশতা তার জন্যও একই দোয়া করে।” (মুসলিম, হাদিস: ২৭৩৩)
৯. অত্যন্ত বিনয়ী ও বিনম্র হয়ে দোয়া করা:
আল্লাহর কাছে বিনয়ী হয়ে, অশ্রুসিক্ত চোখে এবং বিনম্রভাবে দোয়া করা অত্যন্ত প্রভাবশালী। কুরআনে বলা হয়েছে:
“তোমাদের রবকে বিনয়ী ও গোপনীয়ভাবে ডাকো।” (সূরা আরাফ, ৭:৫৫)
১০. ধৈর্য ধারণ করা:
দোয়া করার পর ধৈর্য ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মহানবী (সা.) বলেছেন:
“আল্লাহ বান্দার দোয়া কবুল করেন, যদি সে তাড়াহুড়ো না করে।” (বুখারি, হাদিস: ৬৩৪০)
উপসংহার:
দোয়া কবুলের জন্য সঠিক নিয়ম ও পদ্ধতি মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবার দোয়া কবুল করুন এবং আমাদের সঠিক পথে চলার তাওফিক দান করুন।
পরামর্শ: আপনি প্রতিদিন নির্দিষ্ট কিছু সময় (যেমন তাহাজ্জুদ, ইফতার) আল্লাহর কাছে নিজের এবং অন্যের জন্য দোয়া করতে পারেন। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা রেখে ধৈর্য ধরুন।