
আওয়ার টাইমস টাইমস।
ডেস্ক রিপোর্ট: আজ মহান একুশে ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ভাষার জন্য জীবন উৎসর্গকারী শহীদদের স্মরণে এই দিনটি বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে পালিত হয়। ভাষার অধিকার রক্ষায় ১৯৫২ সালের এই দিনে ঢাকার রাজপথ রঞ্জিত হয়েছিল তরুণ ছাত্রদের রক্তে। তাঁদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে, যা ২০০০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী পালন করা হচ্ছে।
১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তানের বিভক্তির পর পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার চেষ্টা চালায়। কিন্তু তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) জনগণের মাতৃভাষা ছিল বাংলা। বাংলাভাষীদের প্রতি এ অবিচারের প্রতিবাদে ১৯৪৮ সাল থেকেই শুরু হয় ভাষা আন্দোলন।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে যেকোনো সমাবেশ নিষিদ্ধ করে। কিন্তু ছাত্ররা এই আদেশ অমান্য করে ঢাকার রাজপথে বিক্ষোভে নামে। পুলিশ তাঁদের ওপর গুলি চালায়, শহীদ হন সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারসহ আরও অনেকে। তাঁদের আত্মত্যাগের ফলে ১৯৫৬ সালে বাংলা পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি পায়।
বাংলা ভাষার জন্য আত্মত্যাগের এই ইতিহাস বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর থেকে বিশ্বব্যাপী ভাষা ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্য রক্ষার বার্তা ছড়িয়ে দিতে দিনটি বিশেষভাবে পালন করা হয়।
বাংলাদেশে দিনটি শহীদ দিবস হিসেবেও পালিত হয়। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হয় এবং রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সর্বস্তরের মানুষ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানান। সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন আলোচনা সভা, কবিতা আবৃত্তি ও সংগীত পরিবেশনার আয়োজন করে।
বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৭০০০ ভাষা রয়েছে, কিন্তু ভাষাগত বৈষম্য ও বিশ্বায়নের চাপে অনেক ভাষা বিলুপ্তির পথে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস মাতৃভাষার সংরক্ষণ, বিকাশ ও ভাষাগত বৈচিত্র্য রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে।
২১ ফেব্রুয়ারি শুধু এক দিনের আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি ভাষার জন্য আত্মত্যাগের প্রতীক। এ দিবস আমাদের মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা ও গৌরবের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় নতুন প্রজন্মকে এ দিবসের প্রকৃত তাৎপর্য অনুধাবন করতে হবে এবং ভাষার শুদ্ধ চর্চায় মনোযোগী হতে হবে।