
আওয়ার টাইমস নিউজ।
ডেস্ক রিপোর্ট: সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলের কর্মকাণ্ড ইতিহাসের অংশ হিসেবে সংরক্ষণ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেছেন, মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইতোমধ্যে গত ১৫ বছরের নানা ঘটনা নিয়ে গবেষণা ও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ বিষয়গুলো আরও বিস্তারিতভাবে লিপিবদ্ধ করা প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতে এগুলো বিশ্লেষণ করা যায়।
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ‘হৃদয়ে জুলাই-৩৬’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে তিনি বিগত সরকারের সময় ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার ওপর আলোকপাত করেন।
প্রেস সচিব শফিকুল আলম অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেক সাধারণ মানুষকে জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত করেছিল, যা মানবাধিকারের মারাত্মক লঙ্ঘন। তিনি বলেন, “প্রমোশনের জন্য কত মানুষকে অন্যায়ভাবে বন্দি করা হয়েছে, কতজনকে গুম করা হয়েছে, তা নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করা দরকার।”
তিনি আরও বলেন, “শুধু গুম-খুন নয়, বিগত সরকারের সময় বিএনপি ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর ব্যাপক দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে। অনেকের বিরুদ্ধে ৩০ থেকে ৫০টি পর্যন্ত মামলা দেওয়া হয়েছে। এসব অন্যায়ের সঠিক বিচার হওয়া উচিত, যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের স্বৈরাচারী শাসন আর না আসে।”
তিনি দাবি করেন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে প্রায় ৫০০ জন ছাত্র-জনতা মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন এবং অনেকে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমাদের আশপাশের কোনো দেশে পুলিশ এভাবে জনগণের ওপর হামলা চালায়নি, যা বিগত সরকার করেছে। অনেকে নিজেদের বাড়ি ছেড়ে রাজধানীতে এসে রিকশা, উবার বা পাঠাও চালিয়ে জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়েছে। এই বাস্তবতাগুলো ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করা উচিত।”
প্রেস সচিব শফিকুল আলম গবেষকদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, “শেখ হাসিনার শাসনামলের অন্যায়, নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো ইতিহাসের পাতায় লিখে রাখা দরকার, যেন ভবিষ্যতে এসব ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া যায়।” তিনি বলেন, “আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জানাতে হবে, কীভাবে একটি সরকার তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর দমননীতি চালিয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে এমন দানবীয় শাসন আর সৃষ্টি না হয়।”
তিনি আরও বলেন, “দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির ঘটনা নিয়ে অসংখ্য গবেষণা হয়েছে, বই লেখা হয়েছে। তেমনভাবেই শেখ হাসিনার সরকারের ১৫ বছরের শাসনের ঘটনাগুলোও লিপিবদ্ধ করা দরকার।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “এই ১৫ বছরে মানবাধিকারের যে ভয়াবহ লঙ্ঘন হয়েছে, তার প্রমাণ সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। যাতে ভবিষ্যতে এগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনা যায়।”
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষক, গবেষক, সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা, যারা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ইতিহাস সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তার ওপর আলোকপাত করেন।