
আওয়ার টাইমস নিউজ।
ইসলামী ডেস্ক: রমজান মাসে রোজা রাখার জন্য ভোররাতে যে খাবার খাওয়া হয়, তাকে سُحُور (সুহূর) বলা হয়, যার অর্থ “ভোরের খাবার”। এটি শুধু শারীরিক প্রয়োজন নয়, বরং ইসলামের দৃষ্টিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ও বরকতের মাধ্যম। কুরআন ও হাদিসে সেহরির ব্যাপারে বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে এবং এটি সুন্নত হিসেবে প্রমাণিত।
কুরআনে সেহরির নির্দেশনা
আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন—
وَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ
(ওয়া কুলু ওয়াশরাবু হাত্তা ইয়াতাবাইয়ানা লাকুমুল খাইতুল আবিয়াদু মিনাল খাইতিল আসওয়াদি মিনাল ফাজর)।
অর্থ: “তোমরা পানাহার করো, যতক্ষণ না তোমাদের কাছে ফজরের শুভ্র রেখা কৃষ্ণ রেখা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়।” (সূরা আল-বাকারা: ১৮৭)
এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, ফজরের আগ পর্যন্ত সেহরি খাওয়া জায়েজ এবং এটি রোজার প্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
সেহরির গুরুত্ব সম্পর্কে হাদিস
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
تَسَحَّرُوا فَإِنَّ فِي السُّحُورِ بَرَكَةً
(তাসাহহারু, ফাইন্না ফিস্-সুহূরি বারাকাহ্)।
অর্থ: “সেহরি খাও, কেননা সেহরির মধ্যে বরকত রয়েছে।” (সহিহ বুখারি: ১৯২৩, সহিহ মুসলিম: ১০৯৫)
অন্য এক হাদিসে তিনি বলেছেন—
إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى الْمُتَسَحِّرِينَ
(ইন্নাল্লাহা ওয়া মালায়িকাতুহু ইউসাল্লুনা আলাল মুতাসাহহিরীন)।
অর্থ: “নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতারা সেহরি খাওয়াদের জন্য দোয়া করেন।” (মুসনাদ আহমদ: ১১০০৩)
সেহরি খাওয়া রাসুল (সা.)-এর সুন্নত
নবী (সা.) সবসময় সেহরি খেতেন এবং সাহাবাদেরও তা খেতে উৎসাহিত করতেন। তিনি বলেছেন—
فَصْلُ مَا بَيْنَ صِيَامِنَا وَصِيَامِ أَهْلِ الْكِتَابِ أَكْلَةُ السَّحَرِ
(ফাসলু মা বাইনা সিয়ামিনা ওয়া সিয়ামি আহলিল কিতাব আকলাতুস সাহার)।
অর্থ: “আমাদের রোজা ও আহলে কিতাবদের (ইহুদি-খ্রিস্টানদের) রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো সেহরি খাওয়া।” (সহিহ মুসলিম: ১০৯৬)
সেহরির সময় সংক্ষেপে খাওয়ার ফজিলত
নবী (সা.) বলেছেন—
لَا تَزَالُ أُمَّتِي بِخَيْرٍ مَا عَجَّلُوا الْفِطْرَ وَأَخَّرُوا السَّحُورَ
(লা তাযালু উম্মাতি বিখাইরিন মা আজ্জালু আল-ইফতার ওয়া আখখারু আস-সাহুর)।
অর্থ: “আমার উম্মত ততক্ষণ পর্যন্ত কল্যাণে থাকবে, যতক্ষণ তারা ইফতার তাড়াতাড়ি করবে এবং সেহরি বিলম্ব করবে।” (মুসনাদ আহমদ: ২১৪২৮, সহিহ ইবনে হিব্বান: ৩৪৫৭)
সেহরিতে খেজুর ও পানি গ্রহণের সুন্নত
রাসুলুল্লাহ (সা.) সাধারণত খেজুর দিয়ে সেহরি করতেন। যদি খেজুর না পাওয়া যেত, তাহলে শুধু পানি পান করতেন। তিনি বলেছেন—
نِعْمَ سَحُورُ الْمُؤْمِنِ التَّمْرُ
(নিঅ’মা সাহুরুল মুমিনিত তামর)।
অর্থ: “মুমিনের জন্য সর্বোত্তম সেহরি হলো খেজুর।” (সুনান আবু দাউদ: ২৩৪৫)
সেহরির বরকত লাভের উপায়
সেহরির সময় দেরি করা – শেষ রাতের দিকে সেহরি খাওয়া উত্তম।
খেজুর ও পানি গ্রহণ করা – রাসুল (সা.)-এর সুন্নত পালন করা।
সেহরির পর ইস্তিগফার ও দোয়া করা – বরকত লাভের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা।
প্রসঙ্গত: সেহরি শুধু একটি খাবার নয়, এটি একটি বরকতময় আমল। কুরআন ও হাদিসে একে উৎসাহিত করা হয়েছে এবং এটি রাসুল (সা.)-এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। তাই সেহরি খাওয়ার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত, যেন আমরা বরকত লাভ করতে পারি এবং আল্লাহর রহমত অর্জন করতে পারি।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে রোজা পালন এবং সেহরি খাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।