
আওয়ার টাইমস নিউজ।
ইসলামী ডেস্ক: রমজান মাস মুসলিমদের জন্য বিশেষ ফজিলতের মাস। এই মাসে নফল ইবাদত ও দানের সওয়াব অনেক বেশি থাকে, এবং যাকাত দেওয়ার বিষয়টিও এর মধ্যে বিশেষ গুরুত্ব রাখে। যদিও যাকাত আদায়ের সময়সীমা বা মাসের নির্দিষ্ট কোন বাধ্যবাধকতা নেই, তবে রমজান মাসে যাকাত দেওয়া এক ধরনের বিশেষ দান হিসেবে মুসলিমদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
যাকাত কি বাধ্যতামূলক?
যাকাত ইসলামে একজন মুসলিমের উপর একটি বাধ্যতামূলক ইবাদত, তবে এটি কেবল তাদের জন্য যারা নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের মালিক। সাধারণত, যাকাত দেওয়ার জন্য একজন মুসলিমের সম্পদ যদি নিসাব পরিমাণে পৌঁছায়, তবে তাদের ওপর যাকাত প্রদান করা বাধ্যতামূলক হয়। তবে, রমজান মাসে যাকাত দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়, বরং এটি ঐচ্ছিক। তবে এই মাসে এর ফজিলত অনেক বেশি, যা মুসলিমদের অধিক দান করতে উদ্বুদ্ধ করে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সর্বাধিক দানশীল ব্যক্তি এবং রমজান মাসে তিনি আরও বেশি দান করতেন। এ মাসে, যাকাতের সওয়াব বেড়ে যায়, তাই মুসলিমরা বেশি পরিমাণে যাকাত প্রদান করে থাকেন।
কোরআনে আল্লাহ তায়ালা যাকাত গ্রহণের জন্য যে শ্রেণি নির্ধারণ করেছেন, তাদের মধ্যে মোট আটটি শ্রেণি রয়েছে:
১. ফকির (অত্যন্ত দরিদ্র): যারা একেবারেই দরিদ্র এবং তাদের জীবিকার জন্য পর্যাপ্ত কিছু নেই।
২. মিসকিন (নিঃস্ব): যারা খুব সামান্য আয় করেন এবং তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণে অসমর্থ।
৩. আমিলীন (যাকাত সংগ্রহকারীরা): যাকাত সংগ্রহ ও বণ্টনের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা।
৪. মুয়াল্লাফাতুল কুলুব (নতুন মুসলিম): যারা ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন, তাদের সহায়তা করা।
৫. রিকাব (দাস মুক্তি): যাদের মুক্তির জন্য যাকাত ব্যবহার করা হয়।
৬. গারিমিন (ঋণগ্রস্ত): যারা ঋণগ্রস্ত এবং তা পরিশোধ করতে সক্ষম নয়।
৭. ফি সাবিলিল্লাহ (আল্লাহর পথে): যারা আল্লাহর পথে কাজ করছেন, যেমন: ধর্ম প্রচার, দাওয়াহ কার্যক্রম ইত্যাদি।
৮. ইবনুস সাবিল (মুসাফির): যারা ভ্রমণরত অবস্থায় অর্থের অভাবে পড়েছেন।
কোরআনের আয়াত:
إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ ۖ فَرِيضَةً مِّنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
(সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ৬০)
বাংলা অর্থ:
“সদকাহ্ তো ফকির, মিসকিন, তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারী, যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা হয়, দাস মুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে এবং মুসাফিরদের জন্য। এটা আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।”
হাদিসের আলোকে:
রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে তার দানশীলতা আরও বাড়িয়ে দিতেন। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন:
كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَجْوَدَ النَّاسِ، وَأَجْوَدُ مَا يَكُونُ فِي رَمَضَانَ
(সহীহ বুখারি)
বাংলা অর্থ:
“রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন মানুষের মধ্যে সর্বাধিক দানশীল, আর রমজান মাসে তিনি আরও বেশি দানশীল হতেন।”
এটি প্রমাণ করে যে, রমজান মাসে যাকাত ও দানের সওয়াব অনেক বেশি হয়ে যায়, এবং মুসলিমরা এই মাসে দান করতে আরও বেশি উৎসাহিত হন।
প্রসঙ্গত: রমজান মাসে যাকাত প্রদান বাধ্যতামূলক নয়, তবে এই মাসে এর সওয়াব অনেক বেশি। আল্লাহ তায়ালা কোরআনে যাকাত গ্রহণের জন্য যেসব শ্রেণি নির্ধারণ করেছেন, তাদের মধ্যে এ সহায়তা প্রদান করা উচিৎ, যাতে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং দরিদ্রদের সহায়তা করা যায়। রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে দান করার গুরুত্ব বর্ণনা করেছেন, যা মুসলিমদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে।