
আওয়ার টাইমস নিউজ।
ডেস্ক রিপোর্ট: বাবা-মায়েরা অবহেলার শিকার, উচ্চশিক্ষিত সন্তানদের নির্মম আচরণ।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখ্যাত পদার্থবিদ্যা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. এম আব্দুল আউয়াল (৭০) এক সময় ছিলেন বাংলাদেশ এটমিক এনার্জি কমিশনে কর্মরত, শিক্ষকতার মাধ্যমে দেশের শিক্ষা খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। দীর্ঘ ১৭ বছরের শিক্ষকতা জীবনের পর, ২০০৬ সালে তিনি অবসর নেন। কিন্তু তার অবসর জীবনের শুরুতে যে শান্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য তিনি আশা করেছিলেন, তা একেবারেই মেঘলা হয়ে দাঁড়ায়।
অধ্যাপক আব্দুল আউয়াল জানান, তার সন্তানরা, যাদের মধ্যে সবার বড় মেয়ে রেজিনা ইয়াছমিন (যিনি আমেরিকা প্রবাসী), বড় ছেলে উইং কমান্ডার (অব.) ইফতেখার হাসান এবং ছোট ছেলে রাকিব ইফতেখার হাসান (অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী), অবসর পরবর্তী সময়ে তাকে একেবারে একাকী ও অবহেলিত করে তোলে। অবসর নেওয়ার পর প্রথম দিকে কিছুদিন বড় ছেলের সঙ্গে থাকলেও, সেখানে পরিবারে অভ্যন্তরীণ সম্পর্কের সমস্যার কারণে তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে খুব কষ্ট পান।
অধ্যাপক আব্দুল আউয়াল বলছেন, “আমি কি এই জন্য এত কষ্ট করে ওদের মানুষ করেছিলাম?” তার জীবনের একমাত্র স্বপ্ন ছিল, তার সন্তানরা অন্তত মানবিকতা ও নৈতিকতা শিখে তার পাশে দাঁড়াবে, কিন্তু দুঃখজনকভাবে তার অভাব অনুধাবন হয়নি। বিশেষ করে, বড় ছেলে এবং বৌয়ের সম্পর্কের অবনতির কারণে তিনি একদিন ঘর ছেড়ে চলে যান এবং আর ফিরে যাননি।
তার জীবনে এক ধাক্কা আসে যখন ছোট ছেলে অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে এসে তার সঙ্গে দেখা করে। সেখানে, ছোট ছেলে তাকে জানায়, তার বিয়ে হয়ে গেছে, কিন্তু একথা আগে তাকে জানানো হয়নি। শুধু তাই নয়, বড় ছেলে তার সম্পত্তি, ফ্ল্যাট এবং জমি বিক্রি করে টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে জমা করেছে, যা অধ্যাপক আব্দুল আউয়াল অত্যন্ত আক্ষেপের সাথে জানান।
অধ্যাপক আব্দুল আউয়ালের কথায়, “এতো কিছু থাকার পরও কেন ওরা আমাকে এত কষ্ট দেয়? কেন এত ছলচাতুরি করে?” পেনশনের টাকা দিয়ে তিনি তার ছোট ছেলের পড়ালেখার জন্য ২৬ লাখ টাকা পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু আজ তার ছেলেরা তাকে ভুলে গেছে। “অথচ, আজকে আমি যদি একটু সাহায্যের জন্য ফোন করি, তারা আমাকে এক সেকেন্ডের জন্যও সময় দেয় না,” বলেই আব্দুল আউয়াল কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এই ঘটনা একদিকে যেমন এক সময়ের সফল শিক্ষকের একাকীত্বের প্রতিফলন, তেমনি আমাদের আধুনিক শিক্ষিত সমাজের নৈতিকতার অভাবের প্রতীক। প্রবাসে থাকা সন্তানরা নিজেদের জীবন নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও, অনেক সময় নিজের পরিবার, বিশেষত বাবা-মায়ের প্রতি দায়িত্ব ও ভালোবাসা ভুলে যায়। যে সমাজে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের পর মানবিক মূল্যবোধ হারিয়ে যায়, সেখানে সাধারণ মানুষদের মধ্যে, যারা কম শিক্ষিত বা দরিদ্র, তাদের মধ্যে পরিবার ও নৈতিকতার প্রতি আরও বেশি শ্রদ্ধা ও দায়িত্ববোধ থাকে।
অধ্যাপক আউয়াল তার জীবনের এই অভিজ্ঞতার মধ্যে সমাজের এই বাস্তবতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। “অতি উচ্চ শিক্ষিত হতে গিয়ে আমরা দিন দিন আরও অমানুষ হয়ে যাচ্ছি,” তিনি মন্তব্য করেন, যা আমাদের চিন্তা করতে বাধ্য করে যে, সমাজে শিক্ষার পাশাপাশি মানবিকতা ও নৈতিকতা শেখানোও সমান গুরুত্বপূর্ণ।