
আওয়ার টাইমস নিউজ।
ডেস্ক রিপোর্ট: দেশে বড় মাত্রার ভূমিকম্পের আশঙ্কা আবারও জোরালোভাবে সামনে এসেছে। বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ড. মেহেদি আহমেদ আনসারী জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক ৫ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্পটি বড় ধাক্কার আগে একটি সম্ভাব্য ‘ফোর শক’ হতে পারে। তাঁর বিশ্লেষণে, রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্প যদি ঢাকার আশপাশে ঘটে, তাহলে রাজধানীতে দুই থেকে তিন লাখ মানুষের প্রাণহানির ঝুঁকি রয়েছে, পাশাপাশি ঢাকার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধসে যেতে পারে।
শুক্রবার বিকেলে অনুভূত ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল নরসিংদীতে, প্রায় ১০ কিলোমিটার গভীরে; স্থায়িত্ব ছিল প্রায় ২০ সেকেন্ড। বিশেষজ্ঞের মতে, এই কম্পন বড় ধরনের ভূমিকম্পের পূর্বাভাস হিসেবে বিবেচনা করা যৌক্তিক।
ইতিহাস বলছে, বাংলাদেশ ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে গত দেড় শত বছরে অন্তত ছয়টি বড় ভূমিকম্প হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১৮৬৯ সালের কাছাড় ভূমিকম্প (৭.৬), ১৮৯৫ সালের ভূমিকম্প (৭.১), ১৮৯৭ সালের গ্রেট ইন্ডিয়ান ভূমিকম্প (৮.১), ১৯১৮ সালের শ্রীমঙ্গল কম্পন (৭.৬) এবং ১৯৩০ সালের ধুবড়ি ভূমিকম্প (৭.১)। এসব পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বড় ভূমিকম্প সাধারণত ১০০–১২৫ বছর অন্তর ঘটার সম্ভাবনা থাকে। আর ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের বিরতি থাকে প্রায় ২৫০–৩০০ বছর।
অধ্যাপক আনসারী বলেন, ১৯৩০ সালের পর থেকে এই অঞ্চলে বড় মাত্রার কোনো ভূমিকম্প হয়নি, যা উদ্বেগের কারণ। শুক্রবারের মধ্যমাত্রার ভূমিকম্পে ইতোমধ্যে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ভবনে ফাটল ও ক্ষতি দেখা দিয়েছে, এমনকি বিমানবন্দর ভবনের ভেতরেও ফাটল ধরা পড়েছে। তিনি মনে করেন, বিল্ডিং কোড না মেনে নির্মাণ করায় ঝুঁকি আরও বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের হিসাব অনুযায়ী, ঢাকায় প্রায় ২১ লাখ ভবন রয়েছে। এর মধ্যে একতলা ও দোতলা ভবন প্রায় ১৫ লাখ এবং চারতলার ওপরে বাড়ি রয়েছে প্রায় ছয় লাখ। তিনি মনে করেন, এ ভবনগুলোর জরুরি ভিত্তিতে ঝুঁকি মূল্যায়ন করা এখন সময়ের দাবি। এ জন্য আলাদা সরকারি ব্যয়ের প্রয়োজন হবে না বরং পেশাদার ইঞ্জিনিয়ার ও আর্কিটেক্টদের মাধ্যমে ভবনগুলো পরীক্ষা করা সম্ভব।
তার মতে, ঝুঁকির মাত্রা বোঝাতে ভবনগুলোকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা উচিত,
সবুজ: নিরাপদ ভবন
হলুদ/কমলা: মাঝারি ঝুঁকির ভবন; মেরামত করলে নিরাপদ
লাল: জরুরি ভিত্তিতে খালি করে শক্তিশালী করতে হবে
যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ভারতের মতো দেশগুলোতে এমন পদ্ধতি আগে থেকেই অনুসরণ করা হয়।
ড. আনসারী জানান, রানা প্লাজা ধসের পর দেশে ৫০টির বেশি বিশেষায়িত দলকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এখন জরুরি হলো এই প্রশিক্ষণ কাঠামো আরও সম্প্রসারণ করা এবং একটি জাতীয় পর্যায়ের বিশেষায়িত ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে আধুনিক বিল্ডিং কোড অনুযায়ী নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। বিশ্বব্যাংক ২০১৫ সালে এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য অর্থায়ন করলেও সেটি কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি, যা দ্রুত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর শুক্রবারের ভূমিকম্পের মাত্রা জানিয়েছে ৫ দশমিক ৭। ইউএসজিএস জানিয়েছে ৫ দশমিক ৫ মাত্রা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের কম্পন ভবিষ্যৎ ঝুঁকির ইঙ্গিত, তাই এখনই প্রস্তুতি নেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই




























