
আওয়ার টাইমস নিউজ।
ডেস্ক রিপোর্ট: বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানিয়েছেন, তার পরিবার এক মাস ধরে বাজার থেকে খোলা সয়াবিন তেল কিনে ব্যবহার করছে। তার মতে, বোতলজাত ও খোলা সয়াবিন তেলের গুণগত মানে কোনো পার্থক্য নেই, মূল পার্থক্য শুধু দামে।
রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বণিক বার্তা আয়োজিত খাদ্যপণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ বিষয়ক এক নীতিসংলাপে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ বশিরউদ্দীন জানান, সুপারশপ স্বপ্ন-কে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তেলে ভিটামিন ‘এ’ মিশ্রণ বাধ্যতামূলক থাকলেও ভবিষ্যতে এটি ঐচ্ছিক করা হতে পারে বলে তিনি মত দেন।
আসন্ন রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। তিনি জানান, পূর্বে বড় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের অনুপস্থিতিতে বাজার ব্যবস্থাপনায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। ফলে এখন পর্যন্ত বড় কোনো সমস্যা দেখা যায়নি, এবং রমজানেও তা হবে না বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বাজারে প্রতিযোগিতাবিরোধী কার্যক্রম প্রতিরোধে সরকার প্রতিযোগিতা কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করার পরিকল্পনা করছে বলে জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা। এ বিষয়ে তিনি কমিশনের চেয়ারম্যানকে নির্দেশনাও দিয়েছেন।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-কে শক্তিশালী করতে ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ জরুরি বলে মনে করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে টিসিবির কার্যক্রম দুর্বল হয়ে পড়েছে। মাত্র ১৪২ জন কর্মকর্তা ১২ হাজার কোটি টাকার পণ্য বিক্রি পরিচালনা করেন। ব্যবসায়ীদের এই খাতের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
বাণিজ্য উপদেষ্টা জানান, এক কোটি পরিবারের জন্য চালু করা পরিবার কার্ড ব্যবস্থায় অনিয়ম ধরা পড়েছে। যাচাই-বাছাইয়ের পর এই সংখ্যা কমে ৫৭ লাখে নেমেছে এবং আরও পর্যালোচনার মাধ্যমে এটি আরও ২৫ লাখ কমতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
তিনি অভিযোগ করেন, বিগত সরকার জিডিপি, মূল্যস্ফীতি, ব্যাংক ঋণের সুদহার ও ডলারের বিনিময় হার কৃত্রিমভাবে ধরে রেখেছিল, যার প্রভাব বর্তমান সরকারের ওপর পড়েছে। করজাল বাড়ানোর চেয়ে করের ন্যায্যতা ও সমতা নিশ্চিত করাকেই তিনি বেশি গুরুত্ব দেন।
শেখ বশিরউদ্দীন মন্তব্য করেন, বিগত দেড় দশকে দেশে উল্লেখযোগ্য কোনো বিনিয়োগ হয়নি এবং নীতিগুলো ধনী শ্রেণির স্বার্থ রক্ষায় প্রণয়ন করা হয়েছিল। এমনকি তিনি দাবি করেন, “ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে একটি পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া দরকার, কারণ তার শাসনামলে কোনো খাত ধ্বংস হওয়ার বাকি ছিল না।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, দেশে ঋণখেলাপিদের সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এ বিষয়ে সরকারকে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
এ সময় সংলাপে উপস্থিত ছিলেন: সিপিডি-এর গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম (মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক)। বণিক বার্তা-এর সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ (সংলাপ সঞ্চালক)।
এই নীতিসংলাপে খাদ্যপণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এবং অর্থনৈতিক নীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়।