
আওয়ার টাইমস নিউজ।
সম্পাদকীয় কলাম: হুসাইন আল আজাদ।
লেবাননে নিযুক্ত জাতিসংঘের অন্তর্বর্তীকালীন বাহিনী (ইউএনআইএফআইএল) জানিয়েছে, হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধবিরতির পর গত এক বছরের মধ্যে লেবানন ভূখণ্ডে ১০ হাজারবারেরও বেশি বিমান ও স্থল হামলা চালিয়েছে দ’খ’ল’দা’র ই’হু’দী ইসরাইল। এই হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৩১ জন মুসলিম নিহত, আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৯৪৫ জন। নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী, শিশু ও বয়োবৃদ্ধ নিরীহ সাধারণ মানুষ। যেই মানুষগুলোর কোনো যুদ্ধ নেই, কোনো রাজনীতি নেই, ছিল শুধু বেঁচে থাকার অধিকার। সেই অধিকার পর্যন্ত ছিনিয়েছে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে নি’কৃ’ষ্ট’তম ব’র্ব’র হিং’স্র অ’ভি’শ’প্ত ই’হু’দি জাতি ই’স’রা’ইল।
যু’দ্ধ বিরতি চুক্তি ছিল কাগজে কলমে, কিন্তু আগ্রাসন ছিল দ’খ’লদা’র ই’স’রাইলের র’ক্তে র’ক্তে।
গত বছরের ২৭ নভেম্বর হিজবুল্লাহ্ ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষরিত হয়। বিশ্ব ভেবেছিল-এটি হয়তো নতুন করে শান্তির পথ খুলবে। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে ঠিক উল্টো, চুক্তি স্বাক্ষর করে এক বছরেই ইসরাইল বর্ষণ করেছে ১০ হাজারের বেশি আকাশ আগুন, ছুড়েছে সীমান্তপারে হাজারো গোলা। যুদ্ধবিরতি যেন ইসরাইলের কাছে ছিল শুধু কাগজে লেখা ঠাট্টা, আর বাস্তবে ছিল, মৃত্যুর লাইসেন্স!
বর্ষপূর্তির দিনেও লেবাননের আকাশ রাঙালো ভয়াবহ বিমান হামলার আগুনে, যুদ্ধবিরতির বর্ষপূর্তির দিন বৃহস্পতিবারও ইসরাইল নতুন করে হামলা চালিয়েছে দক্ষিণ লেবাননে। জিযিন, আল-মাহমুদিয়া, আল-জারমা-যে নামগুলো একসময় স্বাভাবিক জীবনের প্রতীক ছিল, সেগুলো আজ রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত মুসলিমদের লাশের স্তুপে পরিণত হয়েছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী একটি বিবৃতিতে দাবি করেছে-তারা “হুমকি নিরসনে অভিযান” চালিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এক বছরের শিশুটি কোন হুমকি ছিল? স্কুলে যাওয়ার পথে নিহত কিশোরীটি কোন হুমকি? গর্ভের শিশুকে হারানো মা কোন হুমকি ছিল ইসরাইলের?
জাতিসংঘও বলছে-ইসরাইল রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে নির্যাতন চালাচ্ছে, জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণ তো আরও কঠিন। তারা বলছে, ইসরাইল রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে নির্যাতন, দখলদারিত্ব ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। লেবাননে ১০ হাজার হামলা তারই জীবন্ত প্রমাণ। কিন্তু সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয়-মৌন, পশ্চাৎপদ, ক্ষমতালোভী মুসলিম নেতাদের লজ্জাজনক নীরবতা।
ইসরাইল বোমা মারছে-হাজার হাজার। মানুষ মরছে-শত শত।
ঘরবাড়ি ধ্বংস-হাজারো। নারী-শিশুর কান্নায় আকাশ ভারী-প্রতিদিন।
আর মুসলিম বিশ্বের বেশিরভাগ নেতারা কী করছে? চোখ বুঁজে তেল রক্ষার খাতায় হিসাব রাখছে! তাদের কাছে ক্ষমতার চেয়ার এতই মূল্যবান যে, একজন মুসলিম শিশুর জীবনও তাদের কাছে কোনো মূল্য বহন করে না।
তারা চুপ-কারণ তাদের মুখে আমেরিকা-ইসরাইলের লাগাম।
তারা চুপ- কারণ তাদের সিংহাসন বিদেশি শক্তির ছায়ায় টিকে আছে। তারা চুপ-,কারণ মুসলিম রক্ত নিয়ে তাদের কোনো দায় নেই।
মুসলিম বিশ্বের ৫৭টি দেশের নেতৃত্ব কোথায়? তাদের সেনাবাহিনী কোথায়? তাদের আছে শুধু ক্ষমতা বাঁচানো দায় এড়ানোর বৈঠক ও হাস্যকর বিবৃতি।
শুধু সম্মেলনের ছবি, হাসিমুখ, করমর্দন আর চা-নাস্তার মিটিং!
সেখানে লেবানন জ্বলছে, গাজায় রক্ত ঝরছে, সিরিয়া ধ্বংস, ইয়েমেন ক্ষুধায় কাতর” আর মুসলিম নেতারা ব্যস্ত” “কে কোন চেয়ার পাবে”, “কে কোন দেশের সঙ্গে ব্যবসা করবে”, “কে কোন বিলাসবহুল প্রাসাদ বানাবে”-এইসব নিয়ে!
বিশ্ব যখন আগ্রাসন দেখছে- মুসলিম নেতৃত্ব দেখাচ্ছে চরম নির্লজ্জ কাপুরুষতা।
ইসরাইল এক বছরের মধ্যে লেবাননে ১০ হাজারবার হামলা চালায়, এটি শুধু আগ্রাসন নয়, এটি মুসলিম বিশ্বের প্রতি প্রকাশ্য চপেটাঘাত। আর মুসলিম বিশ্ব নেতারা সেই চপেটাঘাত সহ্য করছে নীরবে, বন্দির মতো, পুতুলের মতো।
আজ যদি মুসলিম বিশ্ব নেতারা ক্ষ’ম’তার মোহে অন্ধ না হয়ে আমেরিকার চা’টু’কারি’তা না করে আল্লাহর ভয় নিয়ে সত্যিকারের নেতৃত্ব দিতো, তাহলে আজ লেবানন আকাশে অ’ভি’শ’প্ত ই’হু’দী ই’স’রাইলি বোমার বিভীষিকাময় ধোঁয়া দেখা যেত না, আজ লেবাননের মাটি শিশুদের র’ক্তা’ক্ত ক্ষ’ত’বিক্ষত লাশের সারি পড়ে থাকতে দেখতে হতো না, আজ ৩৩১টি মুসলিমদের তাজা প্রাণ ঝরে পড়তো না।
ক্ষমতা লো’ভী নি’র্ল’জ্জ বেহা’য়া চা’টু’কার মুসলিম বিশ্ব নেতাদের এই নীরবতা ইতিহাসের পাতায় কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে, এবং তাদের এই নীরবতার ভয়ংকর শাস্তি দুনিয়া ও আখেরাতের উভয়ে জাহানেই ভোগ করতেই হবে।




























