
আওয়ার টাইমস নিউজ।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: তৃণমূল কংগ্রেসের এমএলএ হুমায়ুন কবিরের একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গে শুরু হয়েছে উত্তাল রাজনৈতিক বিতর্ক। শুক্রবার তিনি ঘোষণা দেন, আগামী ৬ ডিসেম্বর মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় ‘নতুন বাবরি মসজিদ’র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে। তার দাবি—মসজিদটি সম্পূর্ণ হতে তিন বছর সময় লাগবে এবং অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মুসলিম নেতা উপস্থিত থাকবেন।
এই ঘোষণা প্রকাশ্যে আসার পরই ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি। দলটির কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতারা হুমায়ুন কবিরের বক্তব্যকে ‘উস্কানিমূলক’ ও ‘ভারতের ঐক্যবিরোধী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
বিজেপির মুখপাত্র গৌরব ভাটিয়া বলেন, “এটি অপরাধমূলক রাজনীতির চূড়ান্ত উদাহরণ। মমতা ব্যানার্জি হিন্দুদের প্রতি ঘৃণা এবং অবৈধ অভিবাসীদের প্রতি পক্ষপাত দেখাচ্ছেন।” তিনি আরও দাবি করেন, যখন পুরো দেশ অযোধ্যার রামমন্দির নিয়ে আনন্দে উদ্বেল, তখন মমতা ব্যানার্জির নির্দেশেই হুমায়ুন কবির এই ঘোষণা দিয়েছেন।
বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুখান্ত মজুমদার অভিযোগ করেন, এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য বাংলার হিন্দুদের ভয় দেখানো। তার ভাষায়, “এ ধরনের মন্তব্য রাজ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ষড়যন্ত্র।”
উত্তরপ্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মউর্যও তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, “ভারতের মাটিতে কোনো বিদেশি আক্রমণকারীর নামে একটি ইটও বসতে দেওয়া হবে না।” তার দাবি, ২০২৬ সালে পশ্চিমবঙ্গেও বিজেপি সরকার গঠিত হবে এবং তখন এসব ঘোষণা করার সুযোগ কেউ পাবে না।
অন্যদিকে, কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী মন্তব্য করেন, মন্দির-মসজিদের নামে দুই পক্ষই নির্বাচনী ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, “আমাদের আপত্তি নেই ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণে। কিন্তু নির্বাচনের আগে এভাবে আবেগকে ব্যবহার করা ঠিক নয়।”
উত্তরপ্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অজয় কুমার লালু বলেন, কংগ্রেস সবসময় সংবিধানের কথা বলে, আর নির্বাচনে চাকরি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষক ও শ্রমিকের স্বার্থই হওয়া উচিত প্রধান বিষয়।
বিজেপির আরেক নেত্রী উমা ভারতী আরও কড়া অবস্থান নেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লিখেন—যদি আল্লাহ, ইবাদত বা ইসলামের নামে মসজিদ নির্মাণ হয়, তাকে সম্মান জানানো হবে; কিন্তু বাবরের নামে কোনো স্থাপনা তৈরি হলে তার পরিণতি হবে অযোধ্যার ঘটনার মতোই। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে দাবি করেন, এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
এদিকে নতুন করে ভারতীয় মুসলমানদের ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ নতুন করে তৈরির ঘোষণায় দেশটির মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষরা খুশি এমনটিই দেখা গিয়েছে দেশটির বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায়।
উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলার পর ভারতজুড়ে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। কয়েক মাস ধরে চলা সেই দাঙ্গায় প্রাণ হারান প্রায় দুই হাজার মানুষ।



























