
আওয়ার টাইমস নিউজ।
আন্তর্জাতিক করেসপন্ডেন্ট: হুসাইন ইবনে নোয়াব।
মুসলিম বিশ্ব ডেস্ক: ১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র হজের খুতবা বৃহস্পতিবার (৫ জুন ২০২৫) মক্কার আরাফাতের ঐতিহাসিক ময়দান থেকে প্রদত্ত হয়। এ বছর খুতবা প্রদান করেন মসজিদে হারাম-এর ইমাম ও খতিব, সৌদি আরবের বিশিষ্ট আলেম শায়েখ ড. সালেহ বিন আবদুল্লাহ বিন হুমাইদ। বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে খুতবা শুরু হয়ে শেষ হয় প্রায় ৩টা ৪০ মিনিটে।
এই গুরুত্বপূর্ণ খুতবায় বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর প্রতি একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর আলোকপাত করা হয়। খুতবাটি একযোগে বিশ্বের ৩৪টি ভাষায় অনুবাদ করে সরাসরি সম্প্রচার করে সৌদি ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রণালয়।
খুতবার মূল বক্তব্য:
আল্লাহর একত্ব ও ইবাদতের আহ্বান:
শায়েখ সালেহ খুতবার শুরুতেই আল্লাহর একত্ব (তাওহিদ) এবং তাঁর একক উপাসনার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, একজন মুসলমানের জীবনের মূল ভিত্তি হলো এই বিশ্বাস“ আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনই একমাত্র উপাস্য, তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই।” এর সাথে সাথে নবী মোহাম্মদ (সা.)-এর প্রেরিত পথ অনুসরণ করাই প্রকৃত সফলতা।
ঈমান ও নৈতিক চরিত্র:
তিনি বলেন, একজন মুসলমানের ঈমান কেবল মুখের উচ্চারণ নয়, বরং তা অন্তরের গভীর বিশ্বাস এবং কর্মে প্রতিফলিত হতে হবে। তিনি বলেন, “নিশ্চয়ই ঈমান ভালো কাজের মাধ্যমে বৃদ্ধি পায়, আর পাপাচার ও অবাধ্যতা তা ক্ষয় করে।”
ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতা:
খুতবায় তিনি উল্লেখ করেন, “আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রাখা একজন মুমিনের দায়িত্ব। জীবনের যেকোনো পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধারণ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশই মুসলমানের পরিচয়।” যেকোনো সংকটে ধৈর্য, আনন্দে কৃতজ্ঞতা এবং গুনাহে অনুতাপ ও তওবা এই তিন গুণই একজন মুসলমানকে পরিপূর্ণ করে।
সদাচরণ ও সমাজচিন্তা:
শায়েখ সালেহ বলেন, “ভালো ও মন্দ কখনো এক হতে পারে না। তুমি মন্দকে প্রতিহত করো উত্তম আচরণ দিয়ে, তাহলে শত্রুও তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধুতে পরিণত হবে।” পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সদাচরণ, সহনশীলতা এবং শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সমাজের দুর্বলদের প্রতি দায়িত্ব:
খুতবায় তিনি জোর দেন, সমাজের গরিব-দুঃখী, এতিম-অসহায়, প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনের হক আদায়ে সবাইকে যত্নবান হতে হবে। তিনি বলেন, “একজন প্রকৃত মুমিন তার প্রতিবেশীকে না খাইয়ে নিজে পরিপূর্ণ খেতে পারে না।”
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি:
বিশ্বের মুসলিমদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং বিভক্ত হয়ো না।” বিভক্তি, বিদ্বেষ ও হিংসা মুসলিম উম্মাহকে দুর্বল করে দেয়। তিনি মুসলিম নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা একসাথে মিলেমিশে শান্তি, সংহতি ও উন্নয়নের পথে হাঁটেন।
পরিবার ও মূল্যবোধ:
খুতবায় পরিবারের ভূমিকা, পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানদের পারস্পরিক দায়িত্ব ও সম্পর্কের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। সমাজে নৈতিকতা রক্ষা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধর্মীয় শিক্ষা ও নৈতিক মূল্যবোধে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়।
প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বময় সম্প্রচার:
বিশ্বের নানা প্রান্তে থাকা মুসলমানরা যেন খুতবার আলোকে নিজেদের জীবন গড়ে তুলতে পারেন, সেই লক্ষ্যে ৩৪টি ভাষায় খুতবাটি একযোগে অনুবাদ ও সম্প্রচার করা হয়। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিমপ্রধান দেশে খুতবাটি রেডিও, টেলিভিশন ও ডিজিটাল মাধ্যমে সরাসরি প্রচার করা হয়।
খুতবার শেষাংশে শায়েখ সালেহ বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তি, প্রগতি ও ঐক্যের জন্য দোয়া করেন। তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন, যেন সব মুসলমান হজের শিক্ষা নিজেদের জীবনে ধারণ করে ইসলামি মূল্যবোধে ফিরে আসতে পারে।
তথ্যসূত্র:
এই প্রতিবেদনটি সৌদি আরবের ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল খুতবা প্রচার ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের অনুবাদসূত্রের ভিত্তিতে প্রস্তুত করা হয়েছে।