
আওয়ার টাইমস নিউজ।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে, বিশেষ করে আসাম রাজ্যে, ভয় ও অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন হাজার হাজার দরিদ্র মানুষ। অভিযোগ উঠেছে—তাদের মধ্যে বহুজনকে ‘বিদেশি’ আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশে জোর করে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যাদের অনেকেই জন্মসূত্রে ভারতীয়, এমনকি সেখানে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন।
এই অভিযানের মূল লক্ষ্য বলে যাদের ধরা হচ্ছে, তারা মূলত দরিদ্র, নিরক্ষর ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। তাদের বিরুদ্ধে কোনো FIR, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কিংবা সরকারি নথি ছাড়াই হঠাৎ করে আটক করা হচ্ছে। এরপর তাদের হাতেই ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে কিছু বাংলাদেশি টাকা, তোলা হচ্ছে ছবি, এবং গোপনে সীমান্তের কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে—যেখানে রাতের আঁধারে বৃষ্টি ভিজে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে “নো ম্যানস ল্যান্ডে”।
বেশ কিছু ভুক্তভোগীর অভিজ্ঞতায় উঠে এসেছে ভয়ংকর কিছু তথ্য। কেউ কেউ বলছেন, দিনের পর দিন আদালতে গিয়ে নাগরিকত্ব প্রমাণের চেষ্টা করে চলেছেন, কারও মামলা এখনো চলমান। তবু হঠাৎ করে কোনো নোটিশ বা আইনি নির্দেশনা ছাড়াই তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।
এক বৃদ্ধা নারী জানান, তাকে রাতে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়া হয়। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি কিছু খেতে না পেয়ে দুর্বল হয়ে পড়েন। পরে তাকে একটি দূরবর্তী বন্দিশিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে সীমান্তে ঠেলে দিয়ে বলা হয়—কোনো কথা বলা যাবে না, নিজ নিজ পথে হাঁটতে হবে।
তিনি জানান, বিজিবি জিজ্ঞেস করে তারা কিভাবে এলো, কেন এলো। অনেকক্ষণের টানাপোড়েনের পর কোনো সুরাহা না হওয়ায় তারা নিজেরাই বাধ্য হয়ে ভারতের দিকে ফিরে হাঁটা শুরু করেন। এ সময় কেউ প্রতিবাদ করলে মারধরের ঘটনাও ঘটেছে বলে অভিযোগ।
যাদের আটক করা হচ্ছে, তাদের পরিবারের কেউ জানতেও পারছেন না প্রিয়জন কোথায় আছেন। ফোন বন্ধ, খোঁজ নেই কোনো দপ্তরে। অনেকে দিন শেষে জানতে পারছেন, সীমান্তে ফেলে রেখে আসা হয়েছে তাদের মা, বোন বা স্বামীকে। আবার কেউ ভাগ্যক্রমে ফিরে এলেও মানসিকভাবে চরমভাবে ভেঙে পড়ছেন।
যেসব মানুষকে এভাবে সীমান্তে ফেলে আসা হচ্ছে, তারা অনেকেই এখনো ভারতীয় আদালতে নিজেকে নাগরিক প্রমাণে লড়াই করছেন। অথচ তাদের দেশে ফেরার কোনো পথ নেই, নেই থাকার কোনো জায়গাও।
আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তিকে অন্য দেশে পাঠানোর জন্য দ্বিপাক্ষিক প্রক্রিয়া, প্রমাণ এবং আদালতের নির্দেশ থাকা জরুরি। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এমন কোনো আইনগত প্রক্রিয়া ছাড়াই অসংখ্য মানুষকে সীমান্তে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এতে আন্তর্জাতিক আইন এবং মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে।
এই অবস্থায় সীমান্তের উভয় পাশে দেখা যাচ্ছে অসংখ্য ছিন্নমূল মানুষের সারি, যাদের কেউ চায়নি, কেউ স্বীকারও করছে না। তারা শুধু বেঁচে থাকার আশায় একপাশ থেকে অন্যপাশে হাঁটছে—জন্মভূমি প্রমাণের যুদ্ধ নিয়ে।