
আওয়ার টাইমস নিউজ।
ইসলামিক ডেস্ক: পবিত্র ঈদুল আজহার মূল শিক্ষা ত্যাগ ও আত্মসমর্পণ। হযরত ইব্রাহিম (আ.) যেভাবে নিজের প্রাণপ্রিয় সন্তানকে আল্লাহর আদেশে কুরবান করতে উদ্যত হয়েছিলেন, সেভাবেই প্রতিটি মুসলিমের মনোভাবে থাকা উচিত কুরবানির সময়। কিন্তু আজ আমরা কুরবানিকে শুধুমাত্র গোশত ভাগের উৎসব বানিয়ে ফেলেছি। অনেক সময় আমাদের কুরবানির পশু ঠিক থাকে, দামও বেশি হয়, লোক দেখানো আয়োজনও জাঁকজমকপূর্ণ হয়, কিন্তু কবুল হয় না, কারণ ভিতরে থাকে না তাকওয়া, খালিস নিয়ত এবং শরীয়তের বিধান।
আসুন আমরা কুরআন ও হাদিসের আলোকে জেনে নিই, ঠিক কি কি কারণে কোরবানি কবুল হয় না:
খাঁটি নিয়তের অভাব।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামী পবিত্র কুরআনে বলেন:
﴿وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ﴾
(সূরা আল-বাইয়্যিনাহ: ৫)
অর্থ: “তাদেরকে আদেশ করা হয়েছিল কেবল আল্লাহর ইবাদত করার জন্য, একান্তভাবে তাঁর প্রতি একাগ্রচিত্ত হয়ে।”
হাদীস শরীফে রাসুল (সা.) বলেন:
“إنما الأعمال بالنيات، وإنما لكل امرئ ما نوى”
(বুখারী, মুসলিম)
অর্থ: কাজের মূল্যায়ন হয় নিয়তের উপর।
যাদের কুরবানি লোক দেখানোর জন্য, আত্মপ্রচারের জন্য—তাদের কুরবানি আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না।
হারাম উপার্জনে কেনা পশু
রাসুল (সা.) বলেন:
“إن الله طيب لا يقبل إلا طيبا”
(মুসলিম)
অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র বস্তু ছাড়া কিছু গ্রহণ করেন না।
ঘুষ, সুদ, জালিয়াতি, চুরি কিংবা হারাম ব্যবসার টাকায় কেনা পশু আল্লাহর কাছে কবুল হয় না।
কুরবানিকে তামাশা বানানো।
আল্লাহ বলেন:
﴿لَن يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَٰكِن يَنَالُهُ التَّقْوَىٰ مِنكُمْ﴾
(সূরা হজ: ৩৭)
অর্থ: “আল্লাহর কাছে পৌঁছে না পশুর গোশত বা রক্ত, বরং পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া।”
পশুর ছবি তুলে ভিডিও বানানো, সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা, হাসি-ঠাট্টা করে তা অপমান করা—এইসব কাজ তাকওয়ার বিপরীত এবং ইবাদতের পবিত্রতা বিনষ্ট করে।
শারীরিক দোষযুক্ত পশু কুরবানী করা
রাসুল (সা.) বলেন:
“চার ধরণের পশু কুরবানির জন্য যথাযথ নয়—এক: কানা, দুই: গুরুতর রোগগ্রস্ত, তিন: খোঁড়া, চার: খুব দুর্বল।”
(আবু দাউদ)
অযোগ্য পশু কুরবানী করলে তা কবুল হবে না। অনেক সময় দাম কমের আশায় এমন পশু কিনে ফেলা হয়, যা শরীয়ত অনুযায়ী বৈধ নয়।
নির্ধারিত সময়ের বাইরে কুরবানী
কুরবানির নির্ধারিত সময় হলো:
> ১০ জিলহজ্জ ঈদের নামাজের পর থেকে ১২ জিলহজ্জ সূর্যাস্ত পর্যন্ত।
কেউ যদি সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পর পশু জবাই করে, তাহলে সেটি ইবাদত হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে না।
অপরাধের দ্বারা ইবাদত নষ্ট করা।
অন্যকে ঠকানো, জোর করে পশু নেয়া, ভাগ নিয়ে ঝগড়া করা, বিতর্ক করা—এসব মনোভাব থাকলে কুরবানির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য পাওয়া যায় না।
কুরবানির রক্ত-গোশত নয়, আল্লাহ কবুল করেন আমাদের ত্যাগ, আন্তরিকতা ও তাকওয়া। তাই শুধু বাহ্যিক আয়োজন নয়, অন্তরের বিশুদ্ধতাই কুরবানির আসল পরিচয়। ইবাদতের এই মহান সুযোগ যেন আমরা অহংকার, অবহেলা বা লোক দেখানোর কারণে নষ্ট না করি।
আসুন, আমরা সবাই তাকওয়া, খালেস নিয়ত ও হালাল উপার্জনের মাধ্যমে কুরবানিকে আল্লাহর সন্তুষ্টির পাথেয় বানাই।
__________________________________________
লেখক: ইসলামিক কলামিস্ট হুসাইন ইবনে নোয়াব।