
আওয়ার টাইমস নিউজ।
ইতিহাস ডেস্ক: ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে সাহসিকতা ও বীরত্বের এক অনন্য ইতিহাস গড়ে তুলেছিলেন বাংলাদেশি বৈমানিক সাইফুল আজম। তিনি ছিলেন বিশ্বের একমাত্র বৈমানিক যিনি চারটি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে রেকর্ড গড়েছেন। এই কৃতিত্বের জন্য তাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘লিভিং ঈগল’ (Living Eagle) উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
১৯৪১ সালে পাবনায় জন্ম নেওয়া সাইফুল আজম পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগ দেন ১৯৫৮ সালে। প্রশিক্ষণে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে বোমাবর্ষণে নিখুঁত লক্ষ্যভেদের জন্য ‘টপ গান’ উপাধি পান। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে একটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ধ্বংস করে তিনি ‘সিতারা-ই-জুরআত’ পদকে ভূষিত হন।
এরপর ১৯৬৭ সালে, জর্ডানে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর হয়ে ডেপুটেশনে থাকাকালে ছয় দিনের যুদ্ধে অংশ নেন। রয়্যাল জর্ডানিয়ান এয়ারফোর্সের একটি হকার হান্টার যুদ্ধবিমান চালিয়ে দুইটি ইসরায়েলি ফাইটার জেট ধ্বংস করেন, যার একটি ছিল ফ্রান্সে তৈরি সুপার মিসটেয়ার এবং অপরটি পালাতে গিয়ে বিধ্বস্ত হয়। এরপর যুদ্ধের দ্বিতীয় দিনে তাকে পাঠানো হয় ইরাকে। সেখানে তিনি ইরাকি বিমানবাহিনীর হয়ে আরও দুটি ইসরায়েলি বিমান, যার মধ্যে একটি ছিল মিরাজ ফাইটার এবং একটি ভুতুর বোমারু বিমান, সেগুলো আকাশেই গুলি করে নামান।
এই সাহসিকতার জন্য তিনি জর্ডানের বাদশাহর কাছ থেকে ‘ওয়াসাম-আল-ইসতিকবাল’, ইরাক থেকে ‘নাওত-আল-সুজা’ এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে ‘লিভিং ঈগল’ সম্মাননায় ভূষিত হন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি পাকিস্তান থেকে পালিয়ে বাংলাদেশের হয়ে যুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সহকর্মীদের নিয়ে একটি বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে ধরা পড়েন এবং তাকে বন্দি করে টানা ২১ দিন নির্জন সেলে নির্যাতন চালানো হয়। জর্ডানের বাদশাহ হুসেইনের হস্তক্ষেপে সামরিক আদালত থেকে মুক্তি পান তিনি। দেশে ফিরতে পারেন ১৯৭৪ সালে।
বাংলাদেশে ফিরে তিনি বিমান বাহিনীর ফ্লাইট সেফটি ডিরেক্টর, অপারেশনস ডিরেক্টর এবং ঢাকার একটি বিমানঘাঁটির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৯ সালে গ্রুপ ক্যাপ্টেন হিসেবে অবসরে যান।
পরে তিনি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)-এর চেয়ারম্যান হন এবং পাবনা-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি এভিয়েশন প্রশিক্ষণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
২০২০ সালের ১৪ জুন ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন এই গৌরবোজ্জ্বল বৈমানিক। বিমান বাহিনীর ঘাঁটি বাশায় জানাজা শেষে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শাহীন কবরস্থানে দাফন করা হয়।
তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে জর্ডানের যুবরাজ হাসান বিন তালাল, ফিলিস্তিনের ইতিহাসবিদ ওসামা আল-আশকার এবং অধ্যাপক নাজি শুকরি তাকে ‘জেরুজালেম রক্ষার বীর’ হিসেবে স্মরণ করেন।
ঈগল খ্যাত পাইলট সাইফুল আজমের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি:
নাম: সাইফুল আজম
জন্ম: ১৯৪১, পাবনা
মৃত্যু: ১৪ জুন ২০২০, ঢাকা
পদবি: গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অব.), বাংলাদেশ বিমান বাহিনী
বীরত্বপূর্ণ রেকর্ড: ৪টি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত
স্বীকৃতি:
‘সিতারা-ই-জুরআত’ (পাকিস্তান)
‘ওয়াসাম-আল-ইসতিকবাল’ (জর্ডান)
নাওত-আল-সুজা’ (ইরাক)
‘লিভিং ঈগল’ (যুক্তরাষ্ট্র)