১৫ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১১ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬
সর্বশেষ
অন্তর্বর্তী ড.মুহাম্মাদ ইউনুস সরকারকে ২০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
৩ কোটি ২০ লাখ টাকা বোনাসের একটি অংশ বন্যার্তদের দেবেন নব স্বাধীন টাইগার ক্রিকেটাররা
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ প্রতিনিধিদল
বাংলাদেশের সাথে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সম্প্রসারণ ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
ছাত্র আন্দোলনে নিহত ৪২২ জনই বিএনপির নেতাকর্মী বললেন মির্জা ফখরুল আলমগীর
শিশুদের পোলিও টিকা দিতে গাজায় মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জাতিসংঘের
আগামীকাল রোববার থেকেই সব কারখানা বন্ধের হুমকি পোশাক মালিকদের
তামিম অবসর নিয়েছে নাকি? প্রশ্ন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের
ভারতের জম্মু-কাশ্মিরে বিদ্রোহী বাহিনীর গুলিতে দুই ভারতীয় সেনা নিহত
সাবেক আওয়ামী সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে জ্যোতিকে ৪ দিনের রিমান্ডে দিয়েছে আদালত

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের নেপথ্য নায়ক কে এই ইয়াহিয়া সিনবার?

আওয়ার টাইমস নিউজ।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গত ৭ই অক্টোবর ইসরা-ইলের কড়া নিরাপত্তা ভেদ করে গত কয়েক দশকের সবচেয়ে শক্তিশালী ও আচমকা অভিযান চালায় ফিলিস্তিনের একটি মুক্তিবাহিনী। এতে ১৪০০’র বেশী ইসরা-ইলি নিহত হয়েছে। নিহত প্রবাসীরাও দ্বৈত-নাগরিক হওয়ায় ইসরা-ইলি। প্রতিশোধ হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় দু’ হাজার শিশু ও প্রায় দেড় হাজার নারীসহ প্রায় ৬ হাজার ফিলিস্তিনী শহীদ হয়েছেন।

যাহোক, এরপর বারবার উঠে আসছে ফিলিস্তিনী মুক্তিযোদ্ধাদের সবচেয়ে শক্তিশালী সশস্ত্র দল হামা-সের নেতা ইয়াহিয়া সিনবারের (৬১) নাম। ইসরা-ইলিরা তাঁকে ‘ফিলিস্তিনের ওসামা বিন লাদেন’ ও ’খাস ইউনিসের কসাই’ বলে কটাক্ষ করে থাকে। ইসরা-ইলি ডিফেন্স ফোর্সের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিচার্ড হেচট ১৪ই অক্টোবর সাংবাদিকদেরকে বলেছেন: ইয়াহিয়া সিনবার এ হামলার পিছনে মাস্টারমাইন্ড। সে ও তার সহযোগীরা ইসরা-ইলি সেনাদের নজরে রয়েছে। তাকে ইসরা-ইল নিজেদের দেশে নিয়ে গিয়ে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে চায়। তাকে ও তার সঙ্গীদেরকে খুঁজে বের করতেই স্থল অভিযান পরিচালনা করা হবে!

বেড়ে ওঠা: সিনবারের পরিবার আগে ফিলিস্তিনের আল-মাজদাল শহরে বসবাস করতেন। ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরা-ইল যুদ্ধে ইসরা-ইল শহরটি দখল করে নিয়ে এটির নাম বদলে রাখে অ্যাশকেলন। আর সিনবারের পরিবার গাজায় পালিয়ে যান। সেখানে ‘খান ইউনিস’ শরণার্থী শিবিরে ১৯৬২ সালে সিনবার জন্মগ্রহণ করেন। তখন গাজা মিসরের অধীনে ছিলো। সেখানেই সিনবার বড় হন। গাজার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি আরবি স্ট্যাটিজে স্নাতক ডিগ্রি নেন। ছাত্র-জীবনে তিনি ইসরা-ইলবিরোধী একাধিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেন।

উত্থান: সিনওয়ার অনেকটা সময়ই জেলে কাটিয়েছেন। ১৯৮২ সালে ইসরা-ইলের বিরুদ্ধে হিংসা ছড়ানোর অভিযোগে তিনি প্রথম গ্রেফতার হয়ে ফারা জেলে ক-মাস ছিলেন। সেখানে সালাহ শেহাদেসহ ফিলিস্তিনী অন্যান্য কর্মীর সাথে তাঁর পরিচয় হয় এবং নিজেকে তিনি ফিলিস্তিনীদের জন্যে উৎসর্গ করেন। শেহাদে পরে হামা-সের কাসসাম বিগ্রেডের প্রধান হন এবং ২০০২ সালে ইসরা-ইলি সেনাদের গুলিতে নিহত হন।

১৯৮৫ সালে সিনবার আবার গ্রেপ্তার হন। মুক্তি পেয়ে তিনি রাহী মুশতাহার সাথে ’মুনাজ্জামাতুল জিহাদ ওয়াল-দাওয়া’ নামে নিরাপত্তা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। এ সংস্থাটি ফিলিস্তিনী আন্দোলনে ইসরা-ইলি গুপ্তচরদের শনাক্ত করতো – যা ১৯৮৭ সালে হামা-সের ’পুলিশ’ হয়ে ওঠে। একাধিক বার গ্রেফতার করেও সিনবারকে বাগে আনতে পারেনি ইসরা-ইল প্রশাসন, বরং তাঁর কাজে বারবার বিপাকে পড়তে হয়েছে সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে তুলনামূলকভাবে উন্নত ইসরা-ইলকে।

১৯৮৮ সালে ইসরা-ইলি দু’ সেনা অপহরণ ও হত্যার দায়ে আবার গ্রেপ্তার হন তিনি। সেই সাথে ইসরা-ইলের হয়ে কাজ করা ফিলিস্তিনী চার গুপ্তচর খুন হলে, এটির পরিকল্পনায় তাঁর নামও জড়ায়। এসব ঘটনায় ইসরা-ইল তাঁকে চারটি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। তিনি কয়েকবার পালানোর চেষ্টা করেও ধরা পড়েন।

২০০৬ সালে একটি সুড়ঙ্গ খুঁড়ে ইসরা-ইলে ঢোকে হামা-সের সামরিক শাখা ইজুদ্দীন আল-কাসসাম ব্রিগেডের কিছু মুক্তিযোদ্ধা। তারা ইসরা-ইলি সেনাবাহিনীর একটি চেকপোস্টে হামলা চালিয়ে দু’ সেনাকে হত্যা এবং আরো বেশ কিছু সেনাকে আহত করে গিলাদ শালিত নামে ইসরা-ইলি এক সেনাকে বন্দী করে নিয়ে আসেন। সে প্রায় পাঁচ বছর হামা-সের আস্তানায় বন্দী ছিলো।

২০০৮ সালে জেলে থাকাকালে জীবন বাঁচাতে সিনবারের মস্তিষ্কে একটি টিউমার অপসারণের জন্যে অপারেশন করা হয়।

২২ বছর জেল খাটার পর, ২০১১ সালে বন্দী বিনিময় একটি চুক্তির আওতায় ঐ গিলাত শালিতের বিনিময়ে ১,০২৬ জন ফিলিস্তিনী বন্দীর সাথে সিনবারকেও মুক্তি দিতে বাধ্য হয় ইসরা-ইল। আজাদ এসব ফিলিস্তিনীর মাঝে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে প্রবীণ।

২০১৫ সালে সিনবার আমেরিকার ওয়ান্টেড সন্ত্রাসীদের তালিকাভুক্ত হন। হামা-সের অন্দরেও তাঁকে নিয়ে বিতর্ক দেখা গিয়েছে। হামা-স কম্যান্ডার মাহমুদ ইশতিইয়ের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল আর জানা গিয়েছিল – সে সমকামী! এরপর সে বছরই (২০১৫) খুন হয় সে। অভিযোগ ওঠে যে, হামা-সের ঘোষিত নীতির সাথে আপস করবেন না বলে মাহমুদকে মেরে ফেলার হুকুম দেন সিনবার।

২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিনবার গোপনে গাজায় হামা-সের নেতা নির্বাচিত হন এবং ইসমাইল হানিয়েহ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেন। মার্চে তিনি গাজার হামা-স নিয়ন্ত্রিত প্রশাসনিক কমিটি প্রতিষ্ঠা করেন – যার অর্থ হলো, তিনি রামাল্লায় ফিলিস্তিনী কর্তৃপক্ষের সাথে ক্ষমতার কোনো রকম ভাগাভাগির বিরোধিতা করেন এবং ইসরা-ইলের সাথে যে কোনো পুনর্মিলন প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি আসলে তাঁর অনমনীয় নীতির জন্যেই জনপ্রিয়তা পান। ইসরা-ইল প্রশ্নে কোনো আপসরফায় যেতে রাজি নন তিনি, বরং একাধিক সভায় জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়ে ইসরা-ইলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনীদের এক জোট করার চেষ্টা চালিয়েছেন। তিনি ইসরা-ইলি আরও সেনা বন্দী করতে হামা-স যোদ্ধাদের আহ্বান জানান। সেপ্টেম্বরে (২০১৭) মিশরে ফিলিস্তিনী কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনার নতুন একটি দফা শুরু হয় এবং তিনি গাজায় হামা-সের প্রশাসনিক কমিটি ভেঙে দিতে রাজি হন। অতি সম্প্রতি তিনি গাজায় ২০১৭ সালে ইসরা-ইলি নয়া প্রযুক্তির দ্বারা বন্ধ করার আগে মুহাম্মাদ দেইফ যে টানেলগুলো ব্যবহার করে লুকিয়ে ইসরা-ইলি যোদ্ধাদের অনুপ্রবেশ করাতে চেয়েছিলেন, তা বাতিল করে দেন।

২০১৮ সালের ১৬ মে আল-জাজিরায় প্রচারিত অপ্রত্যাশিত একটি ঘোষণায় সিনওয়ার বলেন যে, হামা-স শান্তিপূর্ণ ও জনপ্রিয় প্রতিরোধ অনুসরণ করবে এবং এই সম্ভাবনা তৈরী করবে যে, হামা-স ইসরা-ইলের সাথে আলোচনায় ভূমিকা রাখতে পারে। যদিও এর মাত্র এক সপ্তাহ আগে তিনি গাজাবাসীকে ইসরা-ইলি অবরোধ লঙ্ঘন করতে উৎসাহিত করে বলেছিলেন: আমরা জুলুম ও অপমানে মারা যাবার চেয়ে শহীদ হয়ে মরতে চাই … আমরা মরতে প্রস্তুত এবং আমাদের সাথে হাজার হাজার মানুষ মারা যাবে।

২০২১ সালের মার্চে গোপনে অনুষ্ঠিত একটি নির্বাচনে সিনওয়ার হামা-সের গাজা শাখার প্রধান হিসাবে দ্বিতীয় বার চার বছরের মেয়াদে নির্বাচিত হন। তিনি গাজায় সর্বোচ্চ পদ-মর্যাদার হামা-স কর্মকর্তা এবং গাজার অনানুষ্ঠানিক ও কার্যত শাসক। সেই সাথে তিনি ইসমাইল হানিয়েহ’র পর, হামা-সের শক্তিশালী দ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব।

২০২১ সালের ১৫ই মে ইসরা-ইলি একটি বিমান সিনবারের বাড়ীতে হামলা করে বলে জানা যায়। তবে সেখানে হতাহতের তাৎক্ষণিক কোনো বিবরণ পাওয়া যায়নি। ইসরা-ইলি ও ফিলিস্তিনীদের মাঝে বর্ধিষ্ণু উত্তেজনার মাঝে দক্ষিণ গাজার খান ইউনুসে তা সিনবারের জন্মস্থানে এই হামলা চালানো হয়। অবশ্য পরের সপ্তাহেই সিনবার চার বার প্রকাশ্যে হাজির হন। তাঁর সবচেয়ে স্পষ্ট ও সাহসী অবস্থান ছিল ২০২১ সালের ২৭মে – যখন তিনি একটি প্রেস কনফারেন্সে উল্লেখ করেছিলেন যে, এ কনফারেন্সের পর পায়ে হেঁটে তিনি বাড়ীতে যাবেন। তিনি ইসরা-ইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে তাঁকে হত্যার করার চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন! এরপর তিনি কয়েক ঘন্টা গাজার রাস্তায় ঘুরেন এবং জনসাধারণের সাথে সেলফি তুলে সময় কাটান!

ইসমাইল হানিয়েহ স্বেচ্ছা-নির্বাসনে থেকে সব পরিচালনা করে। তাই, সিনবারই এখন গাজার আসল শাসক। তিনি ধারাবাহিকভাবেই ইসরা-ইলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের পক্ষে ছিলেন ও আছেন। সূত্র: উইকিপিডিয়া, দ্যা স্টেটসম্যান, এনডিটিভি ও আনন্দবাজার পত্রিকা।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

ফেসবুক পেজ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

Archive Calendar
শনি রবি সোম মঙ্গল বু বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০  
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত