আওয়ার টাইমস নিউজ।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আফগানিস্তানই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় আফিম উৎপাদক ও সরবরাহী দেশ – যেখান থেকেই ইউরোপ ও এশিয়ায় হেরোইন যেত। তখন ত্বালেবানরা আফিম চাষ নিয়ন্ত্রণ করতো। ২০১৮ থেকে ২০১৯ সালের মাঝে আফিম বাণিজ্য থেকে আনুমানিক ৪০০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছিলো ত্বালেবান – যা দিয়ে তারা অস্ত্র কিনত। ত্বালেবান পুনরায় ক্ষমতাসীন হলে, এই মাদক চাষের উদ্যোগকে নির্মূলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সে মতে, ক্ষমতা পুনরুদ্ধরের পর, ২০২২ সালের এপ্রিলে সেদেশে আফিম চাষের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ত্বালেবান সরকার। এখন জাতিসংঘ জানিয়েছে, ত্বালেবান শাসনে আফগানিস্তানে আফিমের উৎপাদন ৯৫% কমেছে।
গেল রোববার জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ সংক্রান্ত কার্যালয়ের (ইউএনওডিসি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের তুলনায় আফিম চাষ ৯৫%’র বেশী কম হয়েছে। গত বছর ২ লাখ ৩৩ হাজার হেক্টর জমিতে আফিম চাষ হয়েছিল। এবার তা হয়েছে ১০ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। গত বছর আফিম উৎপাদন হয়েছিল ৬ হাজার ২০০ টন। এবার তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৩৩ টনে। এ বছর যে চাষ হয়েছে, তাতে ২৪ থেকে ৩৮ টন হেরোইন রপ্তানি করা যাবে। ২০২২ সালে তা রপ্তানি করা হয়েছিল ৩৫০ থেকে ৫৮০ টন। গত বছর পপি চাষ করে কৃষকদের রোজগার হয়েছিল ১৩৬ কোটি ডলার। এ বছর তা কমে দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ডলারে। যারা আফিম চাষ করতেন, তারা যাতে অস্ত্র পাচার বা অন্য কোনো বেআইনি কাজ না করে, সেদিকে নজর রাখা উচিত।
ইউএনওডিসির নির্বাহী পরিচালক ঘাডা ওয়ালী বলেছেন: আজ আফগানিস্তানের মানুষের জন্যে মানবিক ত্রাণ খুবই জরুরী। ধান ও তুলা চাষের জন্যে প্রচুর পানি দরকার হয়। দেশটিতে পরপর তিন বছর খরা হয়েছে। তাই, মানুষকে বাঁচাতে সেখানে বিনিয়োগ দরকার। তাহলেই আফগানদের আফিম চাষ থেকে সরিয়ে আনা যাবে।
কিন্তু ত্বালেবান ক্ষমতায় আসার পর সেখানে আন্তর্জাতিক ত্রাণ প্রায় যাচ্ছে না বললেই হয়। নারীদের অধিকার নিয়ে চিন্তিত দেশগুলো আফগানিস্তানকে ত্রাণ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
বর্তমানে ৪০% আফগান খাবারের তীব্র অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। টিকে থাকতে মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভর করছেন দেশটির প্রায় অর্ধেক জনগণ।
উল্লেখ্য, আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপকভাবে জন্মায় পপি ফুল। তবে সব পপি ফুল থেকে আফিম বা মাদক দ্রব্য তৈরি হয় না। পপি ফুলের নিরীহ অনেক প্রজাতি রয়েছে – যা বাগানে শোভা পায়। ফল পাকলে, ব্লেড দিয়ে ফলের গায়ে গভীর করে আঁচড় দেয়া হয়। ফলে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা পর সেই ফল থেকে কষ বের হয় – যা চাষীরা সংগ্রহ করেন। আর এটাই হলো – আফিমের কাঁচামাল। এরপর রাসায়নিক নানান প্রক্রিয়ায় অন্যান্য উপজাত জৈব রাসায়নিক দ্রব্য বানানো হয়। এটা থেকে হিরোইন ছাড়াও মরফিন পাওয়া যায় – যা ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফলের বীজগুলো তরকারী হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বীজের নাম পোস্তদানা। ফলের খোসার নাম পোস্তঢেড়ী। সূত্র: আল-জাজিরা, ডয়চে ভেলে ও অন্যান্য