আওয়ার টাইমস নিউজ।
নিউজ ডেস্ক: সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট হুসাইন আল আজাদ।
গত ৫ আগস্ট শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতার গণঅভ্যুত্থানে ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক স্বৈরাচার খ্যাত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)।
এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলছেন, গত ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে যে প্রাণঘাতী সহিংসতা চালানো হয়েছিল, তার বিচারের জন্য শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে এমন সংবাদ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
টানা কয়েক সপ্তাহের আন্দোলন এবং কর্তৃপক্ষের নির্মম দমন-পীড়নের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট একটি সামরিক হেলিকপ্টারে করে ভারতের নয়াদিল্লিতে পালিয়ে যায়। এবং তিনি নয়াদিল্লির কাছে একটি বিমানঘাঁটিতে আশ্রয় নেন।
ভারতে শেখ হাসিনার উপস্থিতির কারণে ঢাকা ও দিল্লির সম্পর্কের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে এবং তাকে বিচারের মুখোমুখি করতে বাংলাদেশ যখন উদ্যোগ নিচ্ছে, ঠিক তখন একটি কূটনৈতিক বিরোধের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটির) প্রধান প্রসিকিউটর জানিয়েছেন, ১৫ বছর ধরে কঠোর হাতে দেশ শাসনের অভিযোগে অভিযুক্ত শেখ হাসিনাকে আন্দোলনের সময় ‘গণহত্যা’ পরিচালনার দায়ে বিচারের জন্য ফেরত আনা হবে।
এ সময় তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, ‘প্রধান অপরাধী যেহেতু দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, আমরা তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য আইনি প্রক্রিয়া শুরু করব। শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় ২০১৩ সালে ভারতের সাথে বাংলাদেশের একটি অপরাধী প্রত্যর্পণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
এ সময় ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর আরো বলেন, যেহেতু শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে গণহত্যার প্রধান আসামি করা হয়েছে, আমরা তাকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য আইনিভাবে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।
এদিকে জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির আগে কয়েক সপ্তাহের সহিংসতায় ৬০০ জনের বেশি শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে, যা ‘সম্ভবত প্রকৃত সংখ্যার চেয়ে কম’ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্বৈরাচার খ্যাত ৭৬ বছর বয়সী শেখ হাসিনাকে ভারতে পালানোর পর থেকে এখন পর্যন্ত জনসমক্ষে দেখা যায়নি। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ তার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করেছে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তির একটি ধারা অনুসারে, অপরাধের ‘রাজনৈতিক চরিত্র’ থাকলে প্রত্যর্পণ প্রত্যাখ্যান করা যেতে পারে।
তবে বাংলাদেশি কর্মকর্তারা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, ক্ষমতাচ্যুত নেত্রীকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য কঠোর হবে ঢাকা।
শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত সপ্তাহে ভারতের সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে বলেন, ‘যদি ভারত তাকে রাখতে চায় তবে শর্ত হলো– তাকে নীরব থাকতে হবে, যতক্ষণ না বাংলাদেশ তাকে ফেরত চায়।
এদিকে বাংলাদেশের জনসাধারণ মানুষ শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সরকারের ওপর চাপ বৃদ্ধি করছে এবং অন্যদিকে তাদের মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব চরমভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অন্যদিকে সাবেক আওয়ামী সরকারের প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভারতীয় গণমাধ্যমকে স্পষ্ট করে বলেছেন, শেখ হাসিনাকে অবশ্যই বাংলাদেশে এনে বিচার করতে হবে। হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ক্রমাগত চাপ তৈরি হচ্ছে ভারতে
ফলে দিল্লি ও ঢাকার সম্পর্কের মধ্যে চরমভাবে ফাটল তৈরি হচ্ছে। ফলে দুই দেশের সীমান্তেও উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।