আওয়ার টাইমস নিউজ।
স্পোর্টস ডেস্ক: বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে ঐতিহাসিক ও রোমাঞ্চকর এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে যাচ্ছে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের লেস্টার সিটির মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরী এবার বাংলাদেশের লাল-সবুজ জার্সি গায়ে মাঠে নামতে চলেছেন। সম্প্রতি ফিফা থেকে অনুমতি পাওয়ার পর তার বাংলাদেশের জাতীয় দলে খেলার পথে আর কোনো বাধা নেই। শুধু খেলা নয়, দেশের ফুটবলের উন্নয়নে কাজ করতেও আগ্রহী হামজা চৌধুরি।
বাংলাদেশ ক্রিকেট ও ফুটবলের চির প্রতিদ্বন্দী দল ভারতের বিপক্ষে এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের পর্বের প্রথম ম্যাচ দিয়েই বাংলাদেশ দলের হয়ে নব সূচনা করবে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা এই তারকা ফুটবলার।
দা অ্যাথলেটিককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হামজা জানান, তিনি বাংলাদেশের মানুষের জন্য খেলতে চান। “বাংলাদেশি মানুষের ভালোবাসা ও সমর্থন আমাকে এ সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছে,” তিনি বলেন। “প্রতিদিন অসংখ্য বার্তা পাই, যেখানে সবাই আমাকে বাংলাদেশের হয়ে খেলতে দেখতে চায়।”
হামজা ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-২১ দলের হয়ে সাতটি ম্যাচ খেলেছেন। তবে ইংল্যান্ডের জাতীয় দলে তার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় নিজের শেকড়ের কাছে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। “ইংল্যান্ডের হয়ে খেলা আর আমার জন্য অপশন ছিল না। তাই এখনই সঠিক সময় আমার শেকড়ের কাছে ফেরার,” তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নয়নের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে হামজা চৌধুরী বলেন,বাংলাদেশের বর্তমান ফিফা র্যাঙ্কিং ১৮৫ হলেও হামজা আশাবাদী। “আমি শুধু মাঠে পারফর্ম করতে চাই না, বরং দেশের ফুটবলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। তরুণ খেলোয়াড়দের আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ এবং সুযোগ দিতে চাই,” বলেন তিনি।
বাংলাদেশে ফুটবলের প্রতি মানুষের উন্মাদনা তাকে মুগ্ধ করেছে। তবে তিনি মনে করেন, দেশের ফুটবলের জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামো নেই। “আমি চাই, বাংলাদেশের তরুণরা ইউরোপের সেরা লিগগুলোতে খেলুক। এটি শুধু খেলোয়াড়দের নয়, পুরো দেশের ফুটবলের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।”
হবিগঞ্জের এক গ্রামে হামজার পরিবারের শেকড়। শৈশব থেকেই তিনি বাংলাদেশে নিয়মিত যাতায়াত করেছেন। “ছোটবেলায় প্রতি বছর বাংলাদেশে যেতাম। গ্রামবাংলার মানুষের জীবনধারা আমাকে শিখিয়েছে কৃতজ্ঞ হতে,” তিনি বলেন।
বাংলাদেশি সংস্কৃতির সঙ্গে হামজার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। “আমার মা প্রতিদিন বাংলাদেশি খাবার রান্না করতেন। আমি বাংলা ভাষায় কথা বলতাম। এই সংস্কৃতি আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমি চাই, আমার সন্তানরাও এই সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হোক।”
হামজা মনে করেন, বাংলাদেশে ফুটবল নিয়ে মানুষের আবেগ ও ভালোবাসা অসাধারণ। “আমি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে চাই, যেখানে দেশের তরুণরা নিজেদের প্রতিভা দেখাতে পারবে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জায়গা করে নিতে পারবে।”
তার জাতীয় দলে যোগদানের মাধ্যমে দলের মনোবল বাড়বে এবং দেশের ফুটবলের উন্নয়নেও বড় পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। হামজা চৌধুরীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের ফুটবল আরও উচ্চতায় উঠবে, এমনটাই প্রত্যাশা করছেন দেশের ফুটবলপ্রেমীরা।