
আওয়ার টাইমস নিউজ।
ইসলামী ডেস্ক: বজ্রপাতের প্রচণ্ড গর্জন এবং আলোর ঝলকানি মহান আল্লাহতায়ালার মহাশক্তির বহিঃপ্রকাশ।
বজ্রপাতের গর্জন ও আলোর ঝলকানি মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ সতর্কবাণী। বজ্রপাত আল্লাহতায়ালা তাঁর প্রিয় বান্দাদের সাবধান করার জন্য বর্ষণ করে থাকেন।
তিনি চাইলে এ বজ্রপাতের মাধ্যমে তাঁর অবাধ্য সীমালঙ্ঘনকারী বান্দাদের শাস্তি প্রদান করতে পারেন, যদিও আল্লাহতায়ালা সব সময় তাঁর বান্দার প্রতি শাস্তিদানের মতো কঠোর আচরণ করেন না। কেননা আল্লাহতায়ালা বান্দার জন্য রাহমান, রাহিম; গাফুর ও গাফ্ফার।
পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে:
﴿وَيُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ وَالْمَلَائِكَةُ مِنْ خِيفَتِهِ وَيُرْسِلُ الصَّوَاعِقَ فَيُصِيبُ بِهَا مَن يَشَاءُ وَهُمْ يُجَادِلُونَ فِي اللَّهِ وَهُوَ شَدِيدُ الْمِحَالِ﴾
(সূরা রা’দ: আয়াত ১৩)
অর্থ:
মেঘের গর্জন তার প্রশংসাসহ আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করে, আর ফেরেশতারাও ভয়ে তা-ই করে। তিনি বজ্রপাত পাঠান এবং যাকে ইচ্ছা তা দ্বারা আঘাত করেন। অথচ তারা আল্লাহ সম্পর্কে বিতর্ক করে, অথচ তিনি কঠোর শাস্তিদাতা।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বজ্রপাতের আওয়াজ শোনার সময় বিশেষ কিছু দোয়া পড়তেন, যা তাঁর উম্মতদের জন্যও সুন্নত।
বজ্রপাত থেকে বাঁচার জন্য নবীজি (সা.) যে দোয়া পড়তেন:
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) তার বাবা থেকে বর্ণনা করেন:
«اللهم لا تقتلنا بغضبك، ولا تهلكنا بعذابك، وعافنا قبل ذلك»
(তিরমিজি)
অর্থ:
হে আল্লাহ! তোমার ক্রোধের দ্বারা আমাদের হত্যা করবেন না, তোমার শাস্তির দ্বারা আমাদের ধ্বংস করবেন না, আমাদের আগে থেকেই ক্ষমা করে দিন।
আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, হজরত ইবনে আবি জাকারিয়া (রা.) বলেন:
«سبحان الله وبحمده»
(মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা)
অর্থ:
আল্লাহ পবিত্র, আর আমি তাঁর প্রশংসা করি।
তিনি বলেন, বজ্রপাতের শব্দ শুনে যে ব্যক্তি এই দোয়া পড়বে, সে বজ্রপাতের আঘাত থেকে নিরাপদ থাকবে।
আরো একটি বর্ণনায় হজরত আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রা.) থেকে বর্ণিত:
«سبحان الذي يسبح الرعد بحمده والملائكة من خيفته»
(মুয়াত্তা মালেক, মিশকাত)
অর্থ:
আমি সেই সত্তার পবিত্রতা ঘোষণা করছি, যার প্রশংসাসহ মেঘের গর্জন পবিত্রতা ঘোষণা করে এবং ফেরেশতাগণ ভয়ে তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করে।
আরো এক হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত:
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ বলেন, “আমার বান্দারা যদি আমার বিধান যথাযথ মেনে চলত, তবে আমি তাদের রাতের বেলায় বৃষ্টি দিতাম আর সকাল বেলায় সূর্যের আলো দিতাম এবং কখনো তাদের বজ্রপাতের আওয়াজ শুনাতাম না।” (মুসনাদে আহমদ)
কুরআনে বজ্রপাতের কারণ হিসেবে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন:
১. ﴿ يَسْأَلُكَ أَهْلُ الْكِتَابِ أَنْ تُنَزِّلَ عَلَيْهِمْ كِتَابًا مِنَ السَّمَاءِ فَقَدْ سَأَلُوا مُوسَى أَكْبَرَ مِنْ ذَٰلِكَ فَقَالُوا أَرِنَا اللَّهَ جَهْرَةً فَأَخَذَتْهُمُ الصَّاعِقَةُ بِظُلْمِهِمْ ﴾
(সূরা নিসা, আয়াত ১৫৩)
অর্থ:
“তারা তোমার কাছে আসমান থেকে গ্রন্থ অবতরণের আবেদন করে; তারা তো এর আগেও মূসার নিকট আরও বড় কিছু চেয়েছিল। তারা বলেছিল, ‘আমরা আল্লাহকে প্রকাশ্যে দেখবো।’ ফলে তাদের জুলুমের কারণে তাদেরকে বজ্রাঘাতে ধরেছিল।”
২. ﴿ فَكُلًّا أَخَذْنَا بِذَنْبِهِ فَمِنْهُم مَّنْ أَرْسَلْنَا عَلَيْهِ حَاصِبًا وَمِنْهُم مَّنْ أَخَذَتْهُ الصَّيْحَةُ وَمِنْهُم مَّنْ خَسَفْنَا بِهِ الْأَرْضَ وَمِنْهُم مَّنْ أَغْرَقْنَا ﴾
(সূরা আনকাবুত, আয়াত ৪০)
অর্থ:
“তাদের প্রত্যেককেই আমি তার পাপের কারণে পাকড়াও করেছি। তাদের মধ্যে কিছুদের ওপর পাথরের ঝড় পাঠিয়েছিলাম, কিছুদেরকে এক বিকট শব্দে ধ্বংস করেছি, কিছুদেরকে জমিনে ধসিয়ে দিয়েছি এবং কিছুদেরকে নিমজ্জিত করেছি।”
৩. ﴿ فَعَتَوْا عَنْ أَمْرِ رَبِّهِمْ فَأَخَذَتْهُمُ الصَّاعِقَةُ وَهُمْ يَنظُرُونَ ﴾
(সূরা যারিয়াত, আয়াত ৪৪)
অর্থ:
“তারা তাদের প্রতিপালকের নির্দেশ অমান্য করেছিল; ফলে বজ্রাঘাত এসে তাদের পাকড়াও করেছিল, যখন তারা তাকিয়ে দেখছিল।”
৪. ﴿ فَذَرْهُمْ حَتَّىٰ يُلَاقُوا يَوْمَهُمُ الَّذِي فِيهِ يُصْعَقُونَ ﴾
(সূরা তুর, আয়াত ৪৫)
অর্থ:
“তুমি তাদের ছেড়ে দাও যতক্ষণ না তারা সেই দিবসে পৌঁছে, যেদিন তাদেরকে বিদ্যুৎচমক বা বজ্রাঘাত গ্রাস করবে।”
সুতরাং: জুলুম-অত্যাচার ও গুনাহর কাজ যত বাড়বে, বজ্রপাত ততই বৃদ্ধি পাবে। বজ্রপাত আল্লাহর গজবের স্পষ্ট প্রমাণ। বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো আল্লাহর বিধান মেনে জীবন পরিচালনা করা।