
আওয়ার টাইমস নিউজ।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গাজায় ইসরায়েলি হামলার ফলে শিশুদের শারীরিক ক্ষতির পাশাপাশি ভয়াবহ মানসিক বিপর্যয়ের শিকার হতে হচ্ছে। জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফের মতে, গাজার প্রায় ১২ লাখ শিশু বর্তমানে মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের মধ্যে আতঙ্ক, হতাশা এবং মৃত্যু-ভয় তীব্রভাবে বেড়ে গেছে।
আট বছর বয়সী সামা তুবাইল এখন আর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াতে পারে না, কারণ তার মাথায় চুলই নেই। ইসরায়েলি হামলার ভয়াবহতা তাকে এতটাই মানসিকভাবে আঘাত করেছে যে তার চুল পড়তে শুরু করেছে, যা চিকিৎসকদের মতে ‘নার্ভাস শক’-এর ফল। সামার মা জানান, চুল হারানোর কারণে সে বাইরে যেতে ভয় পায় এবং সবসময় মাথায় কাপড় পেঁচিয়ে রাখে। হতাশার কারণে সে প্রায়ই বলে, “মা, আমি ক্লান্ত, আমি মরে যেতে চাই।”
গাজার একাধিক মানসিক স্বাস্থ্য গবেষণা বলছে, যুদ্ধের কারণে শিশুদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৯৬ শতাংশ শিশু মনে করে তারা যে কোনো মুহূর্তে মারা যেতে পারে, আর ৪৯ শতাংশ শিশু মনে করে তাদের জীবন শেষ হয়ে গেছে।
ড. ইয়াসির আবু জামেই, গাজার মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একজন, বলেন, “অনেক শিশু এতটাই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত যে তারা কথা বলতেও ভয় পাচ্ছে। কিছু শিশু কেবল শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, তারা হাসতে বা কাঁদতেও পারে না।
ইসরায়েলি হামলায় বাবা-মাকে হারিয়ে অনেক শিশু চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। সাত বছর বয়সী আনাস আবু ইশ এবং তার আট বছর বয়সী বোন দোয়া এখন তাদের দাদির কাছে আশ্রয় নিয়েছে। দাদি ওম-আলাবেদ বলেন, “আনাস প্রায়ই রেগে যায়, বিশেষ করে যখন দেখে অন্য শিশুরা তাদের মায়ের কোলে বসে আছে। সে শুধু তার বাবা-মাকেই হারায়নি, সে হারিয়েছে নিরাপত্তা, ভালোবাসা এবং শৈশবের সব রঙ।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুদ্ধবিরতি হলেও শিশুদের জন্য মানসিক পুনর্বাসন অত্যন্ত জরুরি। ইউনিসেফ ও অন্যান্য সংস্থাগুলো শিশুদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ইসরায়েলি মনোবিজ্ঞানী এডনা ফোয়া বলেন, “এই শিশুদের মানসিকভাবে সুস্থ করতে হলে তাদের নিরাপদ ও স্থিতিশীল পরিবেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।
গাজার বর্তমান পরিস্থিতি শিশুদের ভবিষ্যৎকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বেড়ে ওঠা এই শিশুরা কবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।