২১শে মার্চ, ২০২৫, ২০শে রমজান, ১৪৪৬

রমজানের শেষ দশকে কদরের রাত: হাজার মাসের ইবাদত অর্জনের সুযোগ

আওয়ার টাইমস নিউজ।

ডেস্ক রিপোর্ট: পবিত্র মাহে রমজান, ইসলামের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাস, যা মুসলিমদের জন্য আত্মশুদ্ধি, ক্ষমা ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক বিশেষ সময়। এই মাসের প্রতিটি দিন ও রাতই গুরুত্বপূর্ণ, তবে রমজানের তৃতীয় দশককে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, কারণ এই সময়টি ‘নাজাতের দশক’ এবং এর মধ্যে লাইলাতুল কদরের রাত আসে, যা এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। এটি এমন একটি রাত, যেটিতে আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের ক্ষমা করে দেন, তাদের দোয়া কবুল করেন এবং তাদের জন্য মুক্তির পথে এক নতুন দিশা দেখান।

নাজাতের দশক: ক্ষমা ও মুক্তির সময়

রমজানের শেষ দশককে বলা হয় নাজাতের দশক। এই দশকে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের বিশেষ রহমত ও দয়া প্রদান করেন। ‘নাজাত’ শব্দের আভিধানিক অর্থ মুক্তি, এবং এটি আমাদের পাপমুক্তি এবং দয়া লাভের পথ। হাদিসে এসেছে:

“إِذَا دَخَلَ رَمَضَانُ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ جَهَنَّمَ وَصُفِّدَتْ الشَّيَاطِينُ” (সহীহ মুসলিম)

অর্থাৎ, রমজান মাসের শুরুতে আকাশের দরজা খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করা হয় এবং শয়তানরা শিকলবদ্ধ হয়ে যায়।

এখানে আল্লাহ তায়ালার দয়া, ক্ষমা ও মুক্তির পথে প্রবৃদ্ধির এই দশকটি মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রমজানের এই তৃতীয় দশকে বান্দা আল্লাহর কাছে তওবা করে, এবং তাঁর পাপসমূহ মুছে ফেলার জন্য তদবির করে। আত্মশুদ্ধি ও পরিশুদ্ধির সময় হিসেবে এটি এক বিশেষ সময়।

লাইলাতুল কদর: এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম রাত

রমজানের শেষ দশকেই রয়েছে এক মহিমান্বিত রাত—লাইলাতুল কদর। কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন:

“إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ”
(সূরা আল-কালাম,)

অর্থাৎ, “নিশ্চয়ই আমরা তা (কোরআন) লাইলাতুল কদর রাতে অবতীর্ণ করেছি। এবং আপনি কী জানেন, লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।”

এটি এমন একটি রাত, যেখানে ফেরেশতাগণ পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন, এবং আল্লাহ তায়ালা তাঁদের রহমত ও মাগফিরাতের অফার করেন। হাদিসে এসেছে:

“مَن قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِن ذَنْبِهِ” (সহীহ মুসলিম)

অর্থাৎ, “যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে পূর্ণ ইবাদত করবে, তার পূর্ববর্তী সকল পাপ ক্ষমা করা হবে।”

লাইলাতুল কদর এমন একটি রাত, যেখানে আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাতের বিশেষ বার্তা নেমে আসে। সুতরাং, রমজানের শেষ দশকে মুসলিমরা এই রাতটি সন্ধান করতে থাকেন এবং এই রাতে ইবাদত করে আল্লাহর দয়া ও ক্ষমা লাভের আশায় থাকেন।

লাইলাতুল কদর কখন?
পবিত্র হাদিসে লাইলাতুল কদরের নির্দিষ্ট তারিখ সম্পর্কে কোন স্পষ্ট নির্দেশনা নেই, তবে এটি রমজানের শেষ দশকেই আসে। হাদিসে এসেছে:

“تَحَرَّوْا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِي الْعَشْرِ الْأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ” (সহীহ বুখারি)

অর্থাৎ, “লাইলাতুল কদর রমজানের ২১, ২৩, ২৫, ২৭, অথবা ২৯ তারিখে হতে পারে।”

এছাড়া, কিছু মুসলিম সম্প্রদায় লাইলাতুল কদর ২৭ তারিখে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি মনে করেন। তবে, মুসলিমদের উচিত রমজানের শেষ দশকেই বেশি বেশি ইবাদত করা, যাতে এই বিশেষ রাতের রহমত ও দয়ালুতা মিস না হয়।

কীভাবে আমরা এই মহিমান্বিত রাতটি উপভোগ করতে পারি?

লাইলাতুল কদর পাওয়ার জন্য ইবাদত করা, বিশেষ করে রাতের বেলা, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার জন্য সারা রাত বিশেষ দোয়া, নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত এবং দরুদ পাঠ করতে হবে। হাদিসে এসেছে:

“مَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ” (সহীহ মুসলিম)

এছাড়া, এই রাতে বিশেষভাবে দোয়া ও প্রার্থনা করা উচিত। বিশেষত:

“اللهم إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي” (সহীহ আল-জামি)

অর্থাৎ, “হে আল্লাহ! তুমি দয়ালু, তুমি ক্ষমা করতে ভালোবাসো, সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দাও।”

রমজানের শেষ দশক, বিশেষত লাইলাতুল কদর, আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার। এই রাতটি খুঁজে পেতে, আমাদের উচিত এই রাতকে স্মরণ রেখে পূর্ণ মনোবল ও উৎসাহের সঙ্গে ইবাদত করা। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে, তাঁর রহমত ও মাগফিরাত লাভের জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে রমজান মাসে সর্বোচ্চ ইবাদত ও দোয়ার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি অর্জন করার তাওফিক দান করুন।

اللهم آمين

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

ফেসবুক পেজ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

Archive Calendar
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০৩১  

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত