
আওয়ার টাইমস নিউজ।
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ২০০৯ সালের ভয়াল ফেব্রুয়ারিতে বাংলার হৃদয়ে যে রক্তাক্ত ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল, তা আজও শুকায়নি। সেই বিভীষিকাময় বিডিআর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন যেন হয়ে উঠেছে এক জাতিগত দায়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজ আবারও জোরালো আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে ‘পিলখানা ট্র্যাজেডি’।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) এই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস অত্যন্ত দৃঢ় ও আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, “নৃশংসভাবে নিজেদের অফিসারদেরই তারা মেরেছিল। মসৃণভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল। আমরা সবাই উত্তর খুঁজছি। কমিশনকে এ ঘটনা তদন্তে সফল হতেই হবে। পুরো জাতি তাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।”
তিনি জানান, সরকার তদন্তে কোনো ধরনের গাফিলতি রাখতে চায় না। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক সহায়তাও গ্রহণ করা হবে।
১৬ বছর পেরিয়ে এখনও রহস্য দানা বেঁধে আছে, তদন্ত কমিশনের প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) আলম ফজলুর রহমান বলেন,
“ঘটনার ১৬ বছর পার হয়ে যাওয়ায় প্রমাণ ও সাক্ষীর সংকট দেখা দিয়েছে। অভিযুক্তদের অনেকেই বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের চিহ্নিত করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় কাজ চলছে।”
তিনি আরও জানান, এই হত্যাকাণ্ড ছিল ‘পরিকল্পিত’। তৎকালীন বিডিআর মহাপরিচালককে হত্যার পর ধারাবাহিকভাবে পরিকল্পিতভাবে অন্য অফিসারদের হত্যা করা হয়।
কমিশন তদন্ত করছে এই হত্যাকাণ্ডের ‘প্যাটার্ন’, বিদেশি সংশ্লিষ্টতা এবং অপারেশনের ধরন নিয়েও।
গোয়েন্দা ব্যর্থতা ও রাজনৈতিক প্রশ্ন?
কমিশনের অন্যতম সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার বলেন
এমন জঘন্য হত্যাকাণ্ডের পরও কেউ দায় নিচ্ছে না, কাউকে দায়ীও করা হয়নি। এটি গোয়েন্দা সংস্থা, সামরিক বাহিনী ও রাজনৈতিক ব্যর্থতা।”
তদন্ত কমিশনের অন্যান্য সদস্যরাও একমত যে, পিলখানার ভিতরকার ঘটনাপ্রবাহ ও বাইরের যোগাযোগ—এই দুইয়ের সমন্বিত তদন্ত ছাড়া সত্য উদঘাটন সম্ভব নয়।
আন্তর্জাতিক মহলের প্রতিক্রিয়া ও প্রভাব…
এই হত্যাকাণ্ড শুধু বাংলাদেশের সামরিক ইতিহাসে নয়, বরং আন্তর্জাতিক পরিসরেও নজিরবিহীন। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বরাবরই এই ঘটনার স্বচ্ছ তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে আসছে।
পিলখানার সেই ভয়াল হত্যাকাণ্ড যেন এক গভীর চক্রান্তের ছায়া। কে বা কারা ছিল মূল চালক? বিদেশি ষড়যন্ত্র, অভ্যন্তরীণ বিভক্তি, নাকি নেতৃত্বের দুর্বলতা?—এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতেই চায় পুরো জাতি।
এবার সময় এসেছে মুখোশ উন্মোচনের।