
আওয়ার টাইমস নিউজ।
ইসলামী ডেস্ক: বাংলাদেশের শীত ঋতু অনেকের কাছে আরাম, স্নিগ্ধতা ও স্বস্তির বার্তা নিয়ে আসে। কিন্তু একই শীত অসহায়, গরিব ও পথবাসী মানুষের জন্য কঠিন দুর্ভোগের সময়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তীব্র শীতের কারণে অসংখ্য শিশু, বয়স্ক এবং ছিন্নমূল মানুষ প্রতিদিনই কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়। তাদের জন্য শীত কেবল একটি ঋতু নয়, এটি জীবন রক্ষার সংগ্রাম।
ইসলামে অসহায় মানুষের প্রতি দয়া প্রদর্শন ঈমানের অপরিহার্য অংশ। মহানবী ﷺ মানবসেবাকে শুধু নৈতিক দায়িত্ব নয়; বরং ঈমানের শর্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন—
قال رسول الله ﷺ: «لَيْسَ الْمُؤْمِنُ الَّذِي يَبِيتُ شَبْعَانَ وَجَارُهُ جَائِعٌ» (البخاري)
অর্থ: “সে ব্যক্তি প্রকৃত মুমিন নয়—যে নিজে পরিতৃপ্ত হয়ে রাত কাটায়, আর তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে।”
এই হাদিস শুধু খাবারের কথা নয়; বরং যে কোনো কষ্টে থাকা প্রতিবেশী ও সমাজের দুর্বল মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ব্যাপারে জোর দেয়।
কুরআনেও অসহায় মানুষের প্রতি সহযোগিতা প্রদর্শনের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿وَيُطْعِمُونَ الطَّعَامَ عَلَىٰ حُبِّهِ مِسْكِينًا وَيَتِيمًا وَأَسِيرًا﴾ (سورة الدهر ٨)
অর্থ: “আর তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দরিদ্র, অনাথ ও বন্দীদের আহার করায়।”
এ আয়াত প্রমাণ করে, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের শক্তিশালী উপায়।
শীতকাল: দায়িত্ব ও মানবতার বাস্তব প্রয়োগ
শীতের কষ্ট সবচেয়ে বেশি ভোগে নিম্নআয় পরিবার, নদীভাঙন-দুর্গত মানুষ, পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দা এবং শহরের পথবাসীরা। অনেক পরিবার শীতবস্ত্রের অভাবে শিশুদের নিয়ে রাত কাটায় কাঁপতে কাঁপতে। এই সময়ে সামান্য সহায়তাও তাদের জীবনে বড় স্বস্তি এনে দিতে পারে।
ব্যক্তিগতভাবে যা করা যেতে পারে,
ব্যবহারযোগ্য পরিষ্কার শীতবস্ত্র বিতরণ
কম্বল, জ্যাকেট বা গরম কাপড় দেওয়া
রাতের খাবার সরবরাহ
মসজিদ-ভিত্তিক শীতবস্ত্র সংগ্রহ অভিযান
মানবতার দেয়াল স্থাপন
যুবসমাজকে স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে যুক্ত করা
এসব ছোট উদ্যোগ সমাজে বড় পরিবর্তন আনে, এবং মানবিক মূল্যবোধকে শক্তিশালী করে।
ইসলামের ইতিহাসে মানবসেবা
ইসলামের নবী ও সাহাবিদের জীবন ছিল মানবসেবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্তে পরিপূর্ণ। অসহায় ও নিরুপায় মানুষের প্রতি সাহায্য করা নববী দাওয়াহর অন্যতম মূল শিক্ষা। রাসুল ﷺ নিজ হাতে দান করতেন এবং সাহাবিদের দান-সদকায় উৎসাহিত করতেন। আজকের সমাজেও সেই চেতনা পুনরুজ্জীবিত হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন।
চ্যারিটি ও সামাজিক সংগঠনের পরিসর বাড়ানো জরুরি
শীতকালে দাওয়াহ ও চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানগুলো আরও বৃহৎ পরিসরে কাজ করতে পারে,
শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি
স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প
পথবাসীদের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র
গরম খাবার সরবরাহ
একটি রাতের আশ্রয় বা একটি গরম কম্বলও কোনো মানুষের জীবন রক্ষা করতে সক্ষম।
শীত আমাদের মনে করিয়ে দেয় সমাজের দুর্বল মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অপরিহার্যতা। ইসলাম শেখায়—মানুষের কষ্ট দূর করা ঈমানের অংশ। আর মানবতা বলে, যার প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি, তার পাশে দাঁড়ানোই সর্বোত্তম কাজ।
এই শীতে আসুন
ইসলামি আদর্শ, মানবিকতা ও সম্মিলিত দায়িত্ববোধ দিয়ে অসহায় মানুষের হৃদয়ে উষ্ণতার আলো ছড়িয়ে দিই।
























