
আওয়ার টাইমস নিউজ।
নিউজ ডেস্ক: সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগের অনেক ভুল ছিল। বৃহস্পতিবার (১২ জুন) থাইল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে এক জাতীয় দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেন তার শ্যালক ডা. আনম নওশাদ খান।
তিনি জানান, সাবেক রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, “আমাদের (আওয়ামী লীগের) অনেক ভুল ছিল, না হলে আজ এই অবস্থা হতো না। আজকের পরিণতি আমাদের ভুলেরই শাস্তি।”
প্রসঙ্গত, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। দলটির শীর্ষ নেতারা কেউ পলাতক, কেউ কারাগারে। শেখ হাসিনাসহ অনেকের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও হত্যার অভিযোগে বিচার চলছে। বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনও স্থগিত।
সাবেক রাষ্ট্রপতি হামিদের ঘনিষ্ঠ নওশাদ খান আরও জানান, “২০১২ সালে যখন স্পিকার ছিলাম, তখনই বলেছি—সরকার স্বৈরাচারী হলে জনগণ বেশিদিন সায় দেবে না।” রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থাতেও আওয়ামী লীগের অনেক কর্মকাণ্ড নিয়ে আপত্তি জানাতেন হামিদ।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করা আবদুল হামিদ মনে করেন, দলটির ভবিষ্যতে রাজনীতিতে টিকে থাকতে হলে ভুলগুলো শোধরাতে হবে। বর্তমানে তার শেখ হাসিনার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। এমনকি আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীর সঙ্গেও কোনো কথা হয় না বলে জানিয়েছেন তার শ্যালক।
আবদুল হামিদের বর্তমান শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। থ্রি-টু-ফোর স্টেজ পর্যায়ের লাং ক্যানসারে ভুগছেন তিনি। একা চলাফেরা করতে পারেন না, নামাজও পড়তে পারেন না। শারীরিক দুর্বলতা এতটাই বেশি যে বাথরুমেও সহায়তা লাগে।
তিনি বলেছেন, “নামাজ-কালাম তো পড়ি নাই। আল্লাহই জানেন কী হয়।” তবে তার শ্যালক বলেন, “তিনি অনেক মানুষের উপকার করেছেন, কারও ক্ষতি করেননি। আল্লাহ নিশ্চয়ই মাফ করবেন।”
অনেক আলোচনা থাকা সত্ত্বেও থাইল্যান্ড থেকে দেশে ফেরার ব্যাপারে তিনি অনড় ছিলেন। আবদুল হামিদ বলেন, “দেশেই মরতে চাই। আমার সব আত্মীয়স্বজন এই দেশেই আছে।”
৭ মে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড যাওয়ার পর প্রায় এক মাস সেখানে ছিলেন তিনি। ৮২ বছর বয়সী এই সাবেক রাষ্ট্রপতিকে দেশে ফিরে নিজেই দেখাশোনা করছেন নওশাদ খান।
হাওড়ের কিশোরগঞ্জে জন্ম নেওয়া আবদুল হামিদ সাতবারের সংসদ সদস্য ছিলেন। ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার। টানা ১০ বছর ৪১ দিন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। বঙ্গভবনের চার দেয়ালের ভেতরের জীবনকে তিনি বন্দিজীবন হিসেবে উল্লেখ করতেন।
বর্তমানে তিনি নিজের এলাকায় যেতে না পারলেও নিয়মিত খোঁজখবর নেন। শরীর ভালো না থাকলেও মানসিকভাবে তিনি স্থির আছেন।