
আওয়ার টাইমস নিউজ।
ইসলামী ডেস্ক: শীতের তীব্রতায় অনেক মুসলিম, বিশেষত যারা ঠান্ডাজনিত অসুস্থতায় আক্রান্ত, তারা ওজু বা ফরজ গোসল করতে সমস্যায় পড়েন। এই ধরনের পরিস্থিতিতে ইসলাম অনেক নমনীয় বিধান প্রদান করেছে, যা মুসলিমদের জন্য সহজ এবং নিরাপদ উপায়ে ইবাদত পালনের সুযোগ সৃষ্টি করে। ইসলামের দৃষ্টিতে, বিশেষ পরিস্থিতিতে যেমন শীতকাল, শারীরিক অসুস্থতা বা পানি ব্যবহার করা বিপজ্জনক হলে, তায়াম্মুম করা বৈধ ও যথেষ্ট।
শীতের সময়, বিশেষত যখন তীব্র ঠান্ডায় পানি ব্যবহারে সমস্যা হয়, তখন অনেকেই শারীরিক অসুস্থতায় ভুগতে পারেন। ঠান্ডা আবহাওয়ায় ওজু বা ফরজ গোসল করলে স্বাস্থ্যগতভাবে বিপদ হতে পারে। এ অবস্থায় মুসলিমরা কীভাবে নামাজসহ অন্যান্য ইবাদত পালন করবেন?
ইসলামের বিধান অনুসারে, যদি শীতের কারণে ওজু বা গোসল করা কঠিন হয়ে পড়ে এবং এই কাজটি করা বিপজ্জনক হয়, তাহলে শরিয়ত নির্দেশনা দিয়েছে যে, গরম পানি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে যদি গরম পানি পাওয়া না যায় এবং ঠান্ডার কারণে পানি ব্যবহার স্বাস্থ্যঝুঁকির সৃষ্টি করে, তখন তায়াম্মুম করা বৈধ হবে এবং এর মাধ্যমে নামাজসহ অন্যান্য ইবাদত করা যাবে।
তায়াম্মুম হচ্ছে, যখন পানি ব্যবহার করা সম্ভব না হয়, তখন অ্যালবামের নিয়ত করা, পবিত্র মাটি দিয়ে মুখমণ্ডল এবং হাত মাসাহ করা। তায়াম্মুমের বিধান সুরা মায়েদা, আয়াত ৬-এ বর্ণিত:
“فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا فَمَسُّوا بِهُ وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ” (সুরা মায়েদা, আয়াত: ৬)
অর্থ: “তাহলে তোমরা পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে এবং তাতে তোমরা নিজেদের মুখ এবং হাত মাসেহ করবে।
এ আয়াত থেকে জানা যায় যে, যখন পানি পাওয়া যায় না বা ব্যবহার করা সম্ভব না হয়, তখন তায়াম্মুম করা মুসলিমদের জন্য বৈধ এবং যথেষ্ট। এটি বিশেষত অসুস্থতা বা বিপজ্জনক ঠান্ডা অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
একজন মুসলিম যদি শীতে পানি ব্যবহারে অসুস্থ হয়ে পড়েন বা পানির ব্যবহার তার জন্য বিপজ্জনক হয়, তবে তার জন্য তায়াম্মুম করা বৈধ। এ বিষয়ে আরবের শাইখ সালেহ আল মুনাজ্জিদ এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, যদি একজন ব্যক্তি শীতকালে গোসল ফরজ হওয়া সত্ত্বেও পানি ব্যবহার করার অবস্থায় না থাকে, তাহলে সে তায়াম্মুম করে নামাজ আদায় করতে পারে।
এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি রোগাক্রান্ত হয় এবং পানি ব্যবহার করে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে বা তার মৃত্যু হতে পারে, তবে সে তায়াম্মুম করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন:
“وَلَا تَقْتُلُوا أَنفُسَكُمْ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا” (সূরা নিসা, আয়াত: ২৯)
অর্থ: “তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়ালু।”
এ আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, শারীরিক ক্ষতির শঙ্কায় পানি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং তায়াম্মুম করে ইবাদত সম্পাদন করা যাবে। ইসলামে এটি শারীরিক নিরাপত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান।
হাদিসের আলোকে তায়াম্মুম:
একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস রয়েছে যেখানে আমর বিন আস (রা.) শীতের রাতে গোসল ফরজ হওয়ার পর তায়াম্মুম করে নামাজ আদায় করেন। তিনি নিজে বলেছেন:
“فَتَيَمَّمْتُ فَصَلَّيْتُ بِهِمْ” (সহীহ বুখারি)
অর্থ: “তাহলে আমি তায়াম্মুম করলাম এবং তাদের সাথে নামাজ পড়লাম।”
এ ঘটনার পর, তার সাথীরা যখন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে বিষয়টি জানিয়েছিল, তিনি হেসে দিয়েছিলেন এবং কোনো কিছু বলেননি, যা থেকে বুঝা যায় যে, তায়াম্মুম করা সঠিক ছিল। তিনি অনুমোদন দিয়েছিলেন যে, যখন পানি ব্যবহার করা শারীরিকভাবে ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়, তখন তায়াম্মুম করাই যথাযথ।
শাইখ আব্দুল আযিজ বিন বায (রহ.) বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি গরম পানি সংগ্রহ করতে পারেন বা পানি গরম করতে পারেন, তাহলে সেটি তার জন্য আবশ্যকীয়। আল্লাহ তাআলা বলেন:
“فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ” (সূরা তাগাবুন, আয়াত: ১৬)
অর্থ: “তোমরা যতটুকু সক্ষম, আল্লাহকে ভয় করো।
এ আয়াত থেকে জানা যায় যে, একজন মুসলিম তার সাধ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। তবে যদি পানি পাওয়া না যায়, তাহলে তায়াম্মুম করাই সঠিক উপায়।
উপসংহার:
শীতকালীন তীব্র ঠান্ডা এবং শারীরিক অসুস্থতার কারণে যখন গোসল বা ওজু করা কঠিন হয়, তখন ইসলামের বিধান অনুযায়ী তায়াম্মুম করা বৈধ এবং যথেষ্ট। তায়াম্মুম একটি সহজ এবং নিরাপদ উপায়, যা মুসলিমদের নামাজসহ অন্যান্য ইবাদত পালনে সাহায্য করে। তবে, যদি গরম পানি ব্যবহার করা সম্ভব হয়, তাহলে তা ব্যবহার করা উচিত। ইসলামের এই নমনীয় বিধান মুসলিমদের শারীরিক এবং আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের প্রতি দয়ালু মনোভাব প্রদর্শন করে।