
আওয়ার টাইমস নিউজ।
ডেস্ক রিপোর্ট: বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে ভূমিকম্পের ঘটনা বাড়ছে। গত সাত দিনের মধ্যে দুইবার কেঁপে উঠেছে দেশ, আর গত তিন মাসে মৃদু ও মাঝারি মাত্রার ৫০টির বেশি ভূমিকম্প হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, এগুলো বড় ধরনের ভূমিকম্পের পূর্বাভাস হতে পারে।
বিশ্বের ভূমিকম্পপ্রবণ ২০টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান শীর্ষ তালিকায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকা ছাড়াও সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামে ভয়াবহ ক্ষতি হতে পারে। বুয়েট ও সরকারের যৌথ সমীক্ষা অনুযায়ী, ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্পে ঢাকার প্রায় ৭২ হাজার ভবন ধসে পড়তে পারে। এতে তৈরি হবে সাত কোটি টন ধ্বংসস্তূপ।
বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানই ভূমিকম্পের অন্যতম কারণ। দেশটির ভেতর দিয়ে ভারত ও মিয়ানমার টেকটোনিক প্লেট অতিক্রম করেছে। শত শত বছর ধরে এই প্লেটে বড় কোনো ভূমিকম্প না হওয়ায় সেখানে শক্তি সঞ্চিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এটি ৮ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সৃষ্টি করতে পারে, যা লাখ লাখ প্রাণহানি ঘটাতে সক্ষম।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে তেমন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি বাংলাদেশ। ঢাকার ভবনগুলোর অধিকাংশই ঝুঁকিপূর্ণ, আর অপরিকল্পিত গ্যাস ও বিদ্যুতের লাইন পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে।
বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী জানিয়েছেন, বাংলাদেশের আশপাশে তিনটি টেকটোনিক প্লেট রয়েছে—ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান, ইউরেশিয়ান এবং মিয়ানমার মাইক্রো প্লেট। এসব প্লেট প্রতি বছর প্রায় ৫ সেন্টিমিটার করে সরছে, যা ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
সর্বশেষ ৭ জানুয়ারি তিব্বতে ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্পে শতাধিক মানুষ নিহত হন। এই ভূমিকম্পে তিব্বত ছাড়াও বাংলাদেশ, নেপাল এবং ভারতও প্রভাবিত হয়।
বাংলাদেশে বড় ধরনের ভূমিকম্পের সম্ভাবনা দিন দিন জোরালো হচ্ছে। এ দুর্যোগ মোকাবিলায় উন্নত পরিকল্পনা ও সচেতনতা তৈরি এখন সময়ের দাবি। ভবন নির্মাণে মান নিশ্চিতকরণ এবং ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধারকাজে প্রস্তুতি না থাকলে ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়া কঠিন হবে।