
আওয়ার টাইমস নিউজ।
ডেস্ক রিপোর্ট: মজলুম জননেতা হিসেবে পরিচিত মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী আজ সোমবার। ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর রাজধানীর তৎকালীন পিজি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুর পর তাঁকে টাঙ্গাইলের সন্তোষে দাফন করা হয়, যা পরবর্তীতে তাঁর রাজনৈতিক ও মানবিক সংগ্রামের প্রতীকী কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিতি পায়। দিনটি উপলক্ষে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল ও শ্রদ্ধাঞ্জলি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে মওলানা ভাসানী এমন একটি নাম, যা বঞ্চিত মানুষের আশা, সংগ্রাম ও প্রতিরোধের প্রতিনিধিত্ব করে। তাঁর পুরো রাজনৈতিক জীবন জুড়ে ছিল সাধারণ মানুষের অধিকার রক্ষার অটল অবস্থান। তিনি কৃষক-শ্রমিক থেকে শুরু করে সমাজের নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়িয়েছেন নির্ভীক কণ্ঠে। অন্যায় ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন যুগান্তকারী প্রতিবাদের প্রতীক।
রাজনীতিতে সরলতা ও নিরাসক্ত জীবনযাপন তাঁকে আরও বিশেষ উচ্চতায় নিয়ে যায়। ক্ষমতার কাছে থাকা সত্ত্বেও তিনি কখনও ব্যক্তিস্বার্থকে প্রাধান্য দেননি। তাঁর নীতিনিষ্ঠ অবস্থান ও সাদাসিধে জীবনযাপন দেশের রাজনীতিতে এখনও উদাহরণ হিসেবে আলোচিত। নতুন প্রজন্মের কাছে তিনি সততা, সাহস ও জনগণের প্রতি দায়িত্বশীলতার অন্যতম অনুপ্রেরণা।
দিবসটি উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক বাণীতে বলেন, মওলানা ভাসানী শুধু একজন রাজনৈতিক নেতা নন, তিনি ছিলেন সাম্রাজ্যবাদ, শোষণ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে আপসহীন মুখপাত্র। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বাঙালির জাতীয় উত্থানের বিভিন্ন পর্যায়ে তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ইতিহাসের অংশ হয়ে আছে। কৃষক-শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তাঁর ভূমিকা আজও আলোচিত।
তিনি আরও বলেন, তাঁর বজ্রকণ্ঠের ভাষণ ও সাহসী অবস্থান স্বৈরশাসক ও অত্যাচারীদের হৃদয়ে ভয় সৃষ্টি করত। জনগণের স্বার্থে লড়াই করায় তিনি মানুষের বিশ্বাস অর্জন করেছিলেন। তারেক রহমান তাঁর রূহের মাগফিরাত কামনা করেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও আলাদা বাণী দিয়ে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর সম্মান জানান।
১৮৬০ সালে সিরাজগঞ্জের ধানগড়া গ্রামে জন্ম নেওয়া মওলানা ভাসানী কৈশোর থেকেই সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। জীবনের দীর্ঘ সময় তিনি কাটিয়েছেন টাঙ্গাইলের সন্তোষে, যেখানে তিনি বিভিন্ন সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরবর্তীতে রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে ১৯৫৭ সালে তাঁর সঙ্গে দলটির স্থায়ী বিচ্ছেদ ঘটে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। শোষণমুক্ত ও মানবিক রাষ্ট্র গঠনের তাঁর স্বপ্ন আজও রাজনৈতিক চিন্তার ক্ষেত্রে মূল্যবান হয়ে আছে।


























