
স্পেশাল নিউজ করেসপন্ডেন্ট: হুসাইন আল আজাদ।
আওয়ার টাইমস নিউজ।
প্রবাস ডেস্ক: লিবিয়ার মরুভূমি আর ভূমধ্যসাগরের গভীরে বহুদিন ধরেই লুকিয়ে আছে এক ভয়াবহ দালাল সিন্ডিকেট। স্বপ্নের ইউরোপ দেখিয়ে তারা বছরের পর বছর ধরে আমাদের তরুণদের জীবন কুঁড়ে খাচ্ছে। আর সেই মৃত্যুকূপে এবার ঝরে গেল মাদারীপুরের তিন যুবক, মুন্না তালুকদার, বায়েজিত শেখ এবং ইমরান খান।
হাড় হিম করা গুলির শব্দের সঙ্গে সঙ্গে থেমে গেছে তিনটি পরিবারের হাসি, ভেঙে চুরমার হয়েছে মায়ের বুক, স্ত্রীর স্বপ্ন, সন্তানের ভবিষ্যৎ।
স্বপ্ন ছিল পরিবারকে ভালো রাখার, বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটানোর। কিন্তু দালাল চক্রের নিষ্ঠুর প্রতারণায়, তারা যাত্রা শুরু করার আগেই শিকার হল মাফিয়াদের গুলির। গোপনে লেনদেন, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, ভয়ঙ্কর নির্যাতন—সব মিলিয়ে মানবপাচারের এক নির্মম অধ্যায় আবারও মুখোমুখি দাঁড় করাল আমাদের।
ইমরান খানের পরিবার মোট ৪০ লাখ টাকা দিয়েছে—প্রথমে ২২ লাখ, পরে আরো ১৮ লাখ। কিন্তু সেই টাকা যেন মৃত্যুর টিকিটেই পরিণত হলো। অন্যদিকে মুন্না ও বায়েজিতও একই ফাঁদের শিকার। দালালদের στόপই ছিল তরুণদের অন্ধ স্বপ্ন—একটি ভালো জীবনের আশায় তারা বিশ্বাস করেছিল, কিন্তু শেষমেশ তাদের লাশ সমুদ্রে ফেলেও দিল সেই মাফিয়ারা।
এ দৃশ্য নতুন নয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো—কেন আমাদের যুবকরা আজও এই পথে হাঁটছে? কেন মৃত্যুর ঝুঁকি জানা সত্ত্বেও পরিবারগুলো সবকিছু বিক্রি করে দালালদের হাতে টাকা দিয়ে দেয়?
কারণ….
দারিদ্র্য- বেকারত্ব-বিদেশ গমনের স্বপ্ন- অসহায় পরিবার- দালালদের মিথ্যা আশ্বাস-রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পর্যাপ্ত সচেতনতার অভাব
আজ তিন পরিবার শোকে ভেঙে পড়েছে, পুরো এলাকায় কান্নার সুনামি। যে দালালের বিরুদ্ধে প্রত্যেকবার এমন ঘটনার অভিযোগ ওঠে, সে আবারও লাপাত্তা! শিপন নামের সেই মধ্যস্বত্বভোগী বহুদিন ধরে লিবিয়ার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে নতুন নতুন প্রলোভন ছড়াচ্ছে, অথচ আইন তার নাগাল পাচ্ছে না।
এটা কি আমাদের রাষ্ট্রের জন্য লজ্জাজনক নয়?
এটা কি মানবতার সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা নয়?
পুলিশ বলছে—অভিযোগ পেলে কড়াভাবে ব্যবস্থা নেবে।
কিন্তু আজ প্রশ্ন—অভিযোগ দেওয়ার আগেই যদি ছেলেটা মরেই যায়, তাহলে রাষ্ট্রের কর্তব্য কোথায়?
সরকারের করণীয়
১.মানবপাচার প্রতিরোধে জেলা পর্যায়ে বিশেষ টাস্কফোর্স
২. দালাল চক্রের সম্পত্তি জব্দ ও দ্রুত গ্রেফতার
৩. বিদেশ গমন সংক্রান্ত কঠোর যাচাই এবং সচেতনতা বৃদ্ধি
৪. ভুক্তভোগী পরিবারের জন্য আইনি সহায়তা
৫. উচ্চ ঝুঁকির দেশগুলোতে কর্মসংস্থান বিষয়ক সঠিক নির্দেশনা
পরিবারের করণীয়
১. দালালদের মিষ্টি কথা বা বিদেশে পৌঁছে দেওয়ার প্রলোভনকে বিশ্বাস না করা
১. বৈধ রুট ছাড়া কারও হাতে টাকা না দেওয়া
৩. বিদেশ যাত্রায় দালাল নয়, সরকার অনুমোদিত এজেন্সির ওপর নির্ভর করা
৪. ছেলেদের ওপর অনিশ্চিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার চাপ না দেওয়া
৫. ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে থানায় অভিযোগ করা
আজ তিন যুবকের মৃত্যু আবারও আমাদের সামনে নির্মম বাস্তবতা তুলে ধরেছে,
দালালদের হাত থেকে আমাদের সন্তানদের রক্ষা করা এখনই জরুরি।
একটি ভুল সিদ্ধান্ত, একটি মিথ্যা স্বপ্ন, এভাবেই অগণিত পরিবার চিরতরে অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে।
সরকার, প্রশাসন এবং পরিবার-সকলের সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া এই মৃত্যুর মিছিল থামবে না। এবার সময় এসেছে কঠোরভাবে প্রশ্ন তোলার, আমাদের যুবকদের জীবন কি এতই সস্তা?




























