
আওয়ার টাইমস নিউজ।
নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী জাতীয় নির্বাচনে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে দেশব্যাপী ইমাম–খতিব–মুয়াজ্জিনদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও নিয়মিত ভাতা দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, ইসলামের মূলনীতি ও মুসলমানদের সম্মান রক্ষায় বিএনপি সবসময় অবিচল থেকেছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। ইমাম–খতিবদের আর্থিক নিরাপত্তা, মর্যাদা ও প্রশাসনিক স্বীকৃতি আজ সময়ের দাবি—এটি বাস্তবায়নে বিএনপি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
রবিবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) সম্মিলিত ইমাম-খতিব পরিষদ আয়োজিত জাতীয় সম্মেলনে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন মসজিদের ইমাম-খতিবদের পাশাপাশি বিভিন্ন ইসলামী রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
তারেক রহমান বলেন, সমাজের নৈতিকতা ও মূল্যবোধ রক্ষা, দাওয়াতি কার্যক্রম, তরুণ প্রজন্মকে সঠিক পথে導 করা—এই সব ক্ষেত্রে ইমাম-খতিবরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। অথচ দেশের লাখো ইমাম-মুয়াজ্জিন আর্থিক সংকটে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ অবস্থায় রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে প্রতিমাসে সম্মানী ভাতা দেওয়ার পরিকল্পনা বিএনপি গ্রহণ করেছে। একই সঙ্গে ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্টকে শক্তিশালী করে বহুমুখী প্রকল্প গ্রহণেরও অঙ্গীকার করেন তিনি।
তিনি বলেন, সারাদেশে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মসজিদে প্রায় ১৭ লাখ ইমাম-খতিব-মুয়াজ্জিন দায়িত্ব পালন করছেন। লাখো মসজিদ–মাদ্রাসার মানুষকে রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন কার্যক্রমের বাইরে রেখে একটি টেকসই রাষ্ট্র গড়া সম্ভব নয়। এ কারণে আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনায় বিএনপি ইমাম-খতিবদের উন্নয়ন, সামাজিক মর্যাদা ও নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে।
ইমাম-খতিবদের উপস্থাপিত সাত দফা দাবিকে যৌক্তিক বলে উল্লেখ করেন তিনি। বিশেষ করে ইমাম-খতিবদের জন্য সার্ভিস রুল ও নিয়োগবিধি প্রণয়ন, মসজিদ কমিটিতে সম্মানজনক অংশগ্রহণ, বিদ্যুৎ-পানি বিল মওকুফ, কওমি মাদ্রাসার সনদের মর্যাদা, অযথা হয়রানি বন্ধ, এবং সমাজ সংস্কারমূলক কাজে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি—এসব দাবি বাস্তবায়নে বিএনপি অগ্রাধিকার দেবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, “ইমাম-মুয়াজ্জিনদের চাকরি যদি কমিটি সভাপতির ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করে, তাহলে তা ন্যায়সংগত নয়। ইনশাআল্লাহ, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ইমাম-খতিবদের সার্ভিস রুল বাস্তবায়ন প্রথম দিকের পদক্ষেপগুলোর একটি হবে।”
বক্তব্যের শেষে তিনি নিজের মায়ের সুস্থতা, দলের নেতাকর্মী এবং পুরো দেশের মানুষের জন্য দোয়া চান। দেশ ও জনগণের কল্যাণে সৎকর্ম বাস্তবায়নের সুযোগ পেতে সবার দোয়া–সমর্থন–সহযোগিতা কামনা করেন।
এদিকে ইমাম খতিবদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির বিষয়ে তারেক রহমানের প্রতিশ্রুতির বক্তব্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর জনমণে প্রশ্ন জেগেছে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তারেক রহমানের দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হবে তো? সময়ই বলে দিবে জনতার প্রশ্নের উত্তর।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মুফতি মুহিবুল্লাহিল বাকী। এতে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, এনডিএমের ববি হাজ্জাজ, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের শায়খ আহমদুল্লাহ, ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থসহ বিভিন্ন ইসলামী রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা এবং দেশের বিভিন্ন মসজিদের ইমাম-খতিবরা।
সম্মেলনে মাওলানা আজহারুল ইসলাম ইমাম-খতিবদের সাত দফা দাবি তুলে ধরেন। তার দাবিগুলোর মধ্যে ছিল—রাষ্ট্র পরিচালনায় ইসলামী শরিয়াহকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া, আইনশৃঙ্খলা কমিটিতে ইমাম-খতিবদের অন্তর্ভুক্তি, মসজিদ-মাদ্রাসার বিল মওকুফ, সার্ভিস রোল প্রণয়ন, অন্যায্য গ্রেপ্তার বন্ধ, আলেমদের সরকারি নিয়োগে অগ্রাধিকার এবং সমাজ সংস্কারমূলক কার্যক্রমের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও সম্মানী।



























