আওয়ার টাইমস নিউজ।
ইসলাম জীবন ডেস্কঃ সম্মানিত প্রিয় পাঠক ও পাঠিকা বৃন্দ” আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ্। ক্ষণস্থায়ী এই চাকচিক্যের আধুনিক পৃথিবীতে যেই সকল মানুষ দুনিয়া ও আখেরাতের একমাত্র মহান মালিক আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি অর্জন করতে পেরেছেন, তিনি অবশ্যই অবশ্যই দুনিয়া ও আখেরাতের পরিপূর্ণ সফলতা অর্জন করতে পেরেছেন।
পক্ষান্তরে” যে সকল মানুষ দুনিয়ার মধ্যে টাকা-পয়সা ঘর বাড়ি সব কিছুই পেল, কিন্তু মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনকে সন্তুষ্ট করতে পারলো না” মূলত তারা কিছুই পেলোনা! বরং তারা দুনিয়া ও আখেরাতের স্থায়ী সফলতা থেকে বঞ্চিত হলো!
মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে এই দুনিয়ার মধ্যে সৃষ্টি করেছেন একমাএ তার ইবাদতের জন্য তার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। কিন্তু আমরা কতটুকু আমাদের মহান রব আল্লাহ্কে সন্তুষ্ট করতে পেরেছি? বরং আজ আমরা মহান আল্লাহ্ এবং পরকালের জীবন কে ভুলে গিয়ে দুনিয়ার মোহে আচ্ছন্ন হয়ে আছি! অথচ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ﷺ) আমাদের কে ক্ষণস্থায়ী এই দুনিয়ার মোহে আচ্ছন্ন হওয়া থেকে সতর্ক করে বলেছেন, নিশ্চয়ই দুনিয়া হচ্ছে সবুজ-শ্যামল চাকচিক্যপূর্ণ! আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তোমাদেরকে এই দুনিয়ার মধ্যে প্রতিনিধিত্ব দান করেছেন এই জন্য যে, তিনি দেখবেন” তোমারা দুনিয়ার মধ্যে এসে কি করো এবং কেমন আচরণ করো। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ﷺ) বলেছেন, তোমরা দুনিয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকো এবং সাবধান থাকো! রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ﷺ) দুনিয়ার ব্যাপারে আমাদেরকে সাবধানতা অবলম্বন করতে বলেছেন। হায় আফসোস! অথচ আজ আমরা আমাদের একমাত্র সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন ও চিরস্থায়ী আখেরাতকে ভুলে গিয়ে এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার মোহে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে আছি! এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার উদাহরণ দিতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ﷺ) বলেন, এই দুনিয়ার মূল্য যদি আল্লাহ্ তাআলার কাছে একটি মাছির ডানার সমপরিমাণ ও হতো, তাহলে আল্লাহ্ তাআলা দুনিয়ার মধ্যে কোন কাফেরকে এক ঢোক পানি ও পান করার সুযোগ দিতেন না! হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার উদাহরণ হচ্ছে অথৈ সমুদ্রের মধ্য থেকে আঙ্গুলে উঠে আসা এক ফোঁটা পানির মতো।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ﷺ) বলেছেন দুনিয়া মুমিনের জন্য জেলখানা এবং কাফেরদের জন্য ভোগবিলাসের জায়গা। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ﷺ) আরো বলেছেন, তুমি দুনিয়াতে একজন অপরিচিত লোকের নেয় অথবা একজন মুসাফিরের মত বসবাস করো, এবং তুমি তোমার নিজেকে কবরের অধিবাসী মনে করো। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ﷺ) দুনিয়ার এই ধন-সম্পদকে ফেতনার সামগ্রি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ﷺ) বলেছেন, নিশ্চয়ই প্রত্যেক জাতির জন্য, প্রত্যেক উম্মতের জন্য কিছু ফেতনার সামগ্রী ছিল, আর আমার উম্মতের জন্য ফেতনার সামগ্রী হচ্ছে দুনিয়ার এই ধন-সম্পদ, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ﷺ) বলেছেন, জেনে রেখো এই দিনার-দিরহাম-স্বর্ণ-রৌপ্য টাকা-পয়সা তোমাদের পূর্ববর্তী মানুষদের ধ্বংস করেছিল, এগুলি তোমাদেরকেও ধ্বংস করে ছাড়বে, সম্মানিত পাঠকগণ’ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ﷺ) সত্যিই বলেছেন! এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়া আমাদেরও ধ্বংস করে ছাড়ছে! আমরা সকলেই এই অসুস্থ সমাজের স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি যে, এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার জন্য ভাই ভাইকে খুন করছে! এই তুচ্ছ দুনিয়ার জন্য কলিজার টুকরা সন্তান নিজ মা-বাবাকে খুন করছে! এই তুচ্ছ দুনিয়ার জন্য মা-বাবা তার কলিজার টুকরো সন্তানকে খুন করছে! এই তুচ্ছ দুনিয়ার সামান্য সময়ের ভোগ-বিলাসের জন্যে একে অপরকে অন্যায় ভাবে হত্যা করে আনন্দ উল্লাস করছে!
এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার সামান্য সময়ের সুখের জন্য আজ মানুষ জীবন ধ্বংসকারী বিভিন্ন রকম ভয়ংকর অশ্লীলতা ও বেহায়াপনায় নিমগ্ন হয়ে আছে! হায় আফসোস! আজ আমারা আমাদের প্রতিপালক মহান আল্লাহ্কে ভুলে গিয়ে এই ক্ষণস্থায়ী তুচ্ছ দুনিয়ার ভোগ-বিলাস ও আরাম-আয়েশের জন্য কতই না স্বপ্ন দেখি! অথচ এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়া ছেড়ে একদিন আমাদের সকলকে চলে যেতে হবে মৃত্যুর সেই তিক্ত স্বাদ আমাদের সকলকেই গ্রহণ করতেই হবে! এবং দুনিয়া ও আখিরাতের একমাত্র মালিক আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ঘোষণা অনুযায়ী অচিরেই এই অস্থায়ী রঙ্গিন পৃথিবীর আসমান জমিন সহ সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে! পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন আমাদের উদ্দেশ্য করে বলেন,
یٰۤاَیُّہَا النَّاسُ اِنَّ وَعۡدَ اللّٰہِ حَقٌّ فَلَا تَغُرَّنَّکُمُ الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَا ٝ
*وَ لَا یَغُرَّنَّکُمۡ بِاللّٰہِ الۡغَرُوۡرُ
হে-> দুনিয়ার মানুষ সকল, নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা
সত্য সুতরাং দুনিয়ার জীবন যেন তোমাদেরকে
কিছুতেই প্রতারিত না করে!দুনিয়ার জীবন যেন
তোমাদেরকে কিছুতেই ধোঁকায় না ফেলে!(সূরা-ফা’তির আয়াত-৫)
ও আমার প্রানপ্রিয় ভাই ও বোনেরা, আসুন আমরা সকলেই মহান আল্লাহ্ রব্বুল আলামিনের কাছে আমাদের পূর্বের সমস্ত গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হয়ে অন্তরের অন্তস্থল থেকে খালেস নিয়তে তাওবা করে আমাদের দয়াময় প্রতিপালক মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের কাছে ফিরে আসি, অবশ্যই অসীম দয়াময় দয়ার সাগর মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন আমাদের সমস্ত গুনাহ্ সমূহকে মাফ করে তার প্রিয় গোলাম হিসেবে আমাদের কবুল করে নিবেন।
অন্য এক আয়াতে আল্লাহ্ তায়ালা মুমিন বান্দাদের উদ্দেশ্য করে বলেন।
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا تُوۡبُوۡۤا اِلَی اللّٰہِ تَوۡبَۃً نَّصُوۡحًا ؕؕ عَسٰی
رَبُّکُمۡ اَنۡ یُّکَفِّرَ عَنۡکُمۡ سَیِّاٰتِکُمۡ وَ یُدۡخِلَکُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِہ الۡاَنۡہٰرُ ۙ یَوۡمَ لَا یُخۡزِی اللّٰہُ النَّبِیَّ وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مَعَہٗ ۚ نُوۡرُہُمۡ یَسۡعٰی بَیۡنَ اَیۡدِیۡہِمۡ وَ بِاَیۡمَانِہِمۡ یَقُوۡلُوۡنَ رَبَّنَاۤ اَتۡمِمۡ لَنَا نُوۡرَنَا وَ اغۡفِرۡ لَنَا ۚ اِنَّکَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা
কারো–বিশুদ্ধ তাওবা (১) সম্ভবত তোমাদের রব
তোমাদের পাপসমূহ মোচন করে দেবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে,যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। সেদিন আল্লাহ লাঞ্ছিত করবেন না নবীকে এবং তার সাথে যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে। তাদের নূর তাদের সামনে ও ডানে ধাবিত হবে। তারা বলবে হে আমাদের রব! আমাদের জন্য আমাদের নূরকে পূর্ণতা দান করুন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। (সূরা আত-তাহ্’রিম আয়াত-৮)
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সকলকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে খালেস নিয়তে তাওবা করে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সর্বোচ্চ সফলতা অর্জন করার তৌফিক দান করুন” আমীন’ ইয়া রব্বাল আলামীন।
লেখকঃ হুসাইন আল আজাদ।
প্রধান সম্পাদক আওয়ার টাইমস নিউজ।